ঠিক কোন বয়স থেকে বাচ্চাদের পানি খাওয়াতে হবে- এটা নিয়ে অনেকেই অনেক রকম ধারনা পোষন করেন। কেউ যেমন জন্মের সপ্তাহখানেকের মধ্যে পানি খাওয়াতে চান। আমাদের বড়দের যেমন পানি না খেলে চলেই না, বাচ্চাদেরও আমরা সেরকম ভাবতে শুরু করে দেই।

আসলে মায়ের বুকের দুধ কিংবা ফরমুলাতে পানিয় অংশ থাকে বেশী, যা বাচ্চাকে হাইড্রেটেড রাখে, অতিরিক্ত পানির প্রয়োজন পড়ে না। বাচ্চার প্রথম ছয় মাস (বা ছয়মাসের কাছাকাছি) মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। এরকম শুধুমাত্র বুকের দুধ খাওয়ানো (Exclusive Breastfeeding) করানো মানে কোন অতিরিক্ত পানির প্রয়োজন নেই। ভীষন গরমের সময়ও এটা প্রযোজ্য।

কখন পানি খাওয়ানো শুরু করবো?

বুকের দুধের পাশাপাশি যখন শক্ত বা সলিড খাবার শুরু হয়, তখন থেকে পানি দিতে পারেন। কিন্তু যতটুকু সলিড খাবেন, ততটুকুই পানি দিতে হবে, এমন কথা নেই। কারন তখনো দুধের থেকে বাচ্চার পানির অভাব অনেকখানিই মিটছে। অনেকে শক্ত খাবারের সাথে ছোট কাপ বা বোতলে পানি খেতে দেন বাচ্চাদের। যখনই আপনার মনে হবে বাচ্চা তৃষ্ণার্থ, তখন সামান্য পানি দিন।

কেউ আবার ফরমুলা খাওয়া বাচ্চাদের অল্প পরিমানে পানি দেওয়ার পক্ষপাতী। সাধারণত বুকের দুধ খাওয়া বাচ্চাদের ফর্মুলা নির্ভর বাচ্চাদের কোষ্ঠ্যকাঠিন্য (Constipation) হওয়ার সম্ভাবনা বেশী থাকে। তবে সেক্ষেত্রে পানি দেওয়ার ব্যাপারে সাবধান হতে হবে। পানি ফুটিয়ে, সেদ্ধ করে, ফিল্টার করে তারপর বাচ্চাদের দিতে হবে। কারন যে কোন পানিবাহিত অসুখের ক্ষেত্রে বড়দের তুলনায় বাচ্চারা অনেক বেশী নাজুক থাকে।

ফরমুলা কি পানি মিশিয়ে পাতলা করা যাবে?

ফরমুলাতে অতিরিক্ত পানি মিশিয়ে পরিমানে বাড়ানোর চেষ্টা করা উচিত না। প্যাকেটের গায়ে লেখা নির্দেশাবলী ভালোমতো পড়ে নিয়ে, ঠিক যতটুকু পানির কথা বলা আছে, ততটুকুই ব্যবহার করুন।

কেন ছয় মাস বা তার কম বয়সী বাচ্চাদের জন্য পানি নিরাপদ না?

ছয় মাস বা তার কম বয়সী বাচ্চাদের যদি অতিরিক্ত পানি দেওয়া হয়, তবে তা দুধ বা ফরমুলা থেকে পুষ্টিগুন শরীরে শোষন হওয়ার যে ক্ষমতা, তাকে বাধাগ্রস্থ করে। ছয় মাসের পরও ছোট বাচ্চাদের বেশী পানি খাওয়ানো ক্ষতিকর। এ থেকে পেটে ব্যাথা হতে পারে। এমনকি বেশী পানি ক্ষুধা কমিয়ে দেয়, এবং এতে বাচ্চা অন্য খাবার খেতে চায় না।

বেশী পানি খেলে বাচ্চার ওয়াটার ইনটক্সিকেশন (Water Intoxication) হতে পারে। এটা তখনি হয় যখন অতিরিক্ত পানি শরীরের সোডিয়ামের কনসেন্ট্রেসন ডাইলিউট করে ফেলে। এতে শরীরের ইলেক্ট্রোলাইটের ব্যালেন্স নষ্ট হয়ে যায় এবং টিস্যু ফুলে যায়। এটা থেকে বাচ্চার খিঁচুনী হতে পারে, এমনকি কোমায় পর্যন্ত চলে যেতে পারে।

তবে ব্যাতিক্রম হিসেবে ক্ষেত্রবিশেষে, যেমন পেটের অসুখের কারনে, বাচ্চা যদি পানিশূন্য হয়ে যায়, ডাক্তারের পরামর্শে খাবার স্যালাইন খাওয়ানো যেতে পারে। এসময়ও কতটুকু খাওয়াতে হবে, তার পরিমান জানাটা জরুরী।

কৃতজ্ঞতাঃ বেবিসেন্টার.কম

লেখাটি রিভিউ করেছেন –

ডাঃ সাবেরা সাঈদা খান
M.B.B.S (DU), MPH (Reproductive & Child Health)(NIPSOM),
Diploma in Ultrasonogram
Lecturer, Ibn Sina Medical College
Consultant Sonologist, Trust Medical Care

লেখাটি কি আপনার উপকারে এসেছে?
হ্যানা