টিনএজ মেয়েদের সামলানো বাবা-মা'র জন্য যেন কঠিন পরীক্ষা

বলুন তো সত্যি করে, ‘টিনএজার’ শব্দটি শুনলেই আপনার মনে কী ভেসে উঠে? সদা হাস্যোজ্জ্বল কিশোর-কিশোরী নাকি একদল বিদ্রোহী স্বল্পবয়সী মুখ? পরেরটা হওয়ারই সম্ভাবনা কিন্তু বেশি!

সত্যিই, এই বয়সটা ভীষণ ধানাই পানাই এর বয়স! এটা করবো, সেটা করবো না, ভাল্লাগেনা, তুমি কিছু বুঝ না- এগুলো কমন ডায়ালগের ভীড়ে প্রতিদিন তিনবেলা শোনা আরেকটি হল- খেতে ইচ্ছা করছে না! বড়দের সাথে বোঝাপড়া না হওয়ার বিষয়টা শুধু যে মনস্তাত্বিক তা না, কিছুটা হরমোন আর কিছুটা পরিবেশও এর জন্য দায়ী। হঠাৎ বদলে যাওয়া শরীরটার সাথে অনেকে সহজে খাপ খাইয়ে নিতে পারেনা, আবার অনেকে পারে না নতুন মানসিকতার বন্ধুদের সাথে তাল মেলাতে।

সব মিলিয়ে ভীষণ মানসিক অস্থিরতার প্রভাব গিয়ে পড়ে পরিবারে, খাওয়ার টেবিলে। মা বাবাকে এ সময়ে বুঝতে হবে, তার যেমন একান্ত সময় প্রয়োজন, তেমনি একটু বাড়তি সঙ্গ প্রয়োজন। আরো একটা জিনিস যেটা খুব প্রয়োজন তা হলো- সঠিক পুষ্টি। নাহলে বাড়ন্ত শরীরটায় থেকে যাবে ঘাটতি, থেকে যাবে অসুস্থ একটি প্রজন্মের আশঙ্কা!

যদিও স্কুলের পাঠ্যবইতে এরকম পুষ্টি সংক্রান্ত বিদ্যা অনেক আছে, কিন্তু সেগুলো নিয়ে ছটফটে এই মানুষগুলোর মাথা ঘামাতে বয়েই গেছে! তাই সচেতন হতে হবে অভিভাবকদেরই, বিশেষ করে মাকে। একজন মা, যিনি বাজারের লিস্ট করা থেকে শুরু করে টেবিলে খাবার পরিবেশন করা পর্যন্ত পরিচালনা করেন, তার জন্য সন্তানের সঠিক পুষ্টি নিশ্চিত করা সবচেয়ে সহজ। এর জন্য লাগবে সঠিক জ্ঞান। এরপর থেকে সন্তানের পাতে খাবার তুলে দেয়ার আগে কী কী বিষয় মাথায় রাখবেন একটু দেখে নিন-

১. ক্যালোরি চাই সঠিক পরিমাণে: 

ক্যালোরি আসে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন আর ফ্যাট থেকে; আর ক্যালোরি থেকে আসে শক্তি। একেক মানুষের ক্যালোরির দরকার হয় একেক রকম। এ বয়সে গড়ে কত খেতে হবে সেটা মুখস্ত করার চাইতে ভালো একটু কষ্ট করে ওজন-বয়স-উচ্চতা অনুযায়ী দৈনিক ক্যালোরির চাহিদা বের করে ফেলা-

প্রথমে বের করতে হবে BMR বা ‘বেসাল মেটাবলিক রেট’। অনেক ফর্মুলা আছে এটার জন্য, এর মধ্যে একটা হল-

মেয়েদের BMR = ১০ x ওজন (কেজিতে) + ৬.২৫ x উচ্চতা (সেন্টিমিটার এ) – ৫ x বয়স (বছর) – ১৬১

এরপরই দৈনিক PAL বা ‘ফিজিক্যাল এক্টিভিটি লেভেল’ অনুযায়ী নির্ধারিত মানটির সাথে গুণ করলেই বের করা যাবে দৈনিক ক্যালোরির চাহিদা।

Physical activity level (PAL)PAL value
ক. সারাদিন শুধু হালকা কাজ বা বেশির ভাগ ভাগ সময় শুয়ে, বসে কাটলে১.৫৩
খ. সারাদিনে অন্তত এক ঘন্টা হাঁটা বা ব্যায়াম হলে ১.৭৬
গ. প্রতিদিন অন্তত দু ঘন্টা ব্যায়াম, খেলাধুলা বা শারীরিক কসরত করলে২.২৫

মোট দৈনিক চাহিদা (Energy Requirement/ ER, Kcal) = BMR (আগের ফর্মুলা হতে) x PAL value (চার্ট হতে বের করবেন)

এই ফর্মুলা থেকে প্রাপ্ত Kcal হতেই কম বেশি করে ওজন নিয়ন্ত্রণ করা যায়। যদি বয়সের তুলনায় ওজন বেশি হয়, তাহলে প্রতিদিন ER থেকে ২৫০ Kcal কম করে খেলে দুই সপ্তাহে ০.৫ কেজি করে ওজন কমবে।  ডুবো তেলে ভাজা একটা সিঙ্গারাতেই কিন্তু ২৫০ Kcal থাকে! আর যদি ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে কম হয়, তাহলে ER এর থেকে ২৫০ Kcal বাড়িয়ে খেলে একই হারে ওজন বাড়বে।

এই বয়সে হঠাৎ মুটিয়ে গেলে নানা ধরনের হরমোনজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে, যেমন- মাসিক অনিয়মিত হয়ে পড়ে, মুখে লোম গজায়। তাই সচেতন হওয়া জরুরি। আজকালকার অনেক টিনএজার আবার একটু বেশিই সচেতন থাকে! দ্রুততম সময়ে স্লিম হওয়ার জন্য ক্র্যাশ ডায়েট করে, যা খুব ক্ষতিকর। শর্টকাট কোন জিনিসই ভালো ফল দেয়না। প্রতিদিন একটু করে কম খেলে আর বাইরের হাবিজাবি খাবার না খেলেই কয়েক মাসে কাঙ্খিত ওজনে পৌঁছানো সম্ভব।

যারা সন্তানের পাতে কি তুলে দিবেন, কতটুকু তুলে দিবেন এ নিয়ে চিন্তিত তারা ছবির স্যাম্পল মেনুটি ফলো করতে পারেন। তবে একদম কঠিনভাবে অনুকরণ করতে হবে না। বরং আইটেমগুলোতে ভিন্নতা আনার চেষ্টা করবেন; না আনলে সহজে বোর হয়ে যাওয়া প্রজন্মকে ঠিক মত খাওয়াতে পারবেন না! আর হ্যাঁ, মাঝে মধ্যে একটু কম-বেশি খাওয়া, দাওয়াত খাওয়া, একটু বাইরে খাওয়া- সবই এলাউড।

food chart for teenage girls টিনেজারদের একদিনের স্যাম্পল খাবারের তালিকা

২. বাড়তি প্রোটিন: 

ছোটবেলা থেকেই আমরা জেনে আসছি যে প্রোটিনের কাজ হলো ‘দেহের ক্ষয়পুরণ ও বৃদ্ধি সাধন’। তাই এই বাড়ন্ত বয়সে প্রোটিন খুব জরুরি। একজন টিনএজ মেয়ের দৈনিক ৩৫-৪৫ গ্রাম প্রোটিন খাওয়া উচিত, যা হবে দৈনিক চাহিদার ১৫-২০%।

টিনএজারদের মাংস তো বরাবরই পছন্দ, সেই সাথে প্রোটিনের অন্য উৎস গুলোতেও অভ্যাস করাতে হবে। মাছ, ডিম, ডাল, বাদাম ইত্যাদি হলো এক্ষেত্রে আরো অপশন। বিশেষ করে ডিম, প্রতিদিন সকালে একটা ডিম যেন ওর পেটে যায়। কাঁটার ভয়তে মাছ খেতে না চাইলে কম কাঁটার মাছ দিতে পারেন বা মাছ ভর্তা করেও দিতে পারেন, তবু দিন। প্রায়শই সামুদ্রিক মাছ আর কাঁটা সহ ছোট মাছ খাওয়াতে পারলে ব্রেইন, হাড় আর চোখের কর্মক্ষমতা বাড়বে বহু গুণে! ঝোলের বদলে ডালের অভ্যাস থাকলে খুবই ভালো। মাংসের ক্ষেত্রে গরু, খাসি এগুলো টেবিলে কম থাকলেই উত্তম। 

৩. সঠিক মাত্রার কার্ব: 

কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা এর পরিমাণই আমাদের প্লেটে বেশি থাকে। দৈনিক এর পরিমাণ হওয়া উচিত টোটাল খাবারের ৫০-৬০%। এই কার্ব কিন্তু মোটা দাগে দু প্রকার- সিম্পল ও কমলেক্স। সিম্পল কার্ব হল সহজ পাচ্য, এগুলো সহজেই শোষণ হয়। কমপ্লেক্স কার্বগুলো ভাঙতে বা শোষণ হতে সময় নেয় বেশি। এ বয়সে দুটোই দরকারি। 

সিম্পল কার্ব গুলো শক্তি যোগাবে চট করে। চিনি, মিষ্টি ফল, দুধ (ল্যাকটোজ সমৃদ্ধ), পাউরুটি বা যেকোন রিফাইন্ড খাবার (সিম্পল সুগার সমৃদ্ধ) ইত্যাদি সিম্পল কার্ব এর উৎস। আর কমপ্লেক্স কার্ব, যেমন- ভাত, সিরিয়াল, শাক-সবজি, ডাল ইত্যাদি ধীরে ধীরে দেহে শক্তি যোগাবে। তাই এগুলো সকালের নাস্তায় রাখলেই ভালো। 

এই বয়সে মিষ্টি খাবারের খুব ঝোঁক থাকে মানুষের। ডায়বেটিস নেই বলে ইচ্ছামত মিষ্টি জিনিস খেতে দিবেন না যেন! সাদা চিনিকে বলা হয় এখন ‘স্লো পয়জন’! চায়ে দিয়ে হোক বা আইস্ক্রিমে, দিনে পাঁচ চা চামচের বেশি চিনি যাতে আপনার বা আপনার সন্তানের পেটে না যায়। মধু বা লাল চিনি হতে পারে চিরপরিচিত সাদা চিনির অল্টারনেটিভ।

৪. ফ্যাটও দরকারি: 

আমাদের কিছু ভুল ধারণা আছে যে ফ্যাট খুব ক্ষতিকর। কিন্তু কথাটা পুরোপুরি সত্য নয়। অতিরিক্ত খেলে যে কোনো জিনিসই ক্ষতিকর। সব বয়সেই দরকার ফ্যাট, কম আর বেশি। শর্ট চেইন ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ খাবার (যেমন- ঘি) শরীরে শক্তি যোগাবে খুব দ্রুত। তাই ক্ষীণকায়দের জন্য এটা আদর্শ। 

যারা একটু মোটা, তাদের শরীরে চর্বি জমা আছেই। তাই তাদের ফ্যাটের চাহিদা কম। তাদের কার্ব আর ফ্যাট কমিয়ে দিলে জমে থাকা চর্বিগুলোই ভেঙে শক্তির যোগান দিবে। মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, খাওয়ার তেল ইত্যাদি থেকেই যথেষ্ট ফ্যাট আসে, তাই বাড়তি কিছুর চিন্তা করতে হবে না, যদি না আপনার সন্তান ‘তাল পাতার সেপাই’ হয়! 

আর হ্যা, ভাজা পোড়া ছেলে বুড়ো সবাই পছন্দ করে জানি, কিন্তু সেগুলো যত কম খাওয়া যায় ততই ভালো। টিনএজারদের ‘ভালোবাসার ফাস্ট ফুড’ এ থাকে প্রচুর ট্রান্স ফ্যাট, ক্ষতিকর কেমিক্যাল (রং, প্রিজারভেটিভ ইত্যাদি),  আর থাকে অতিরিক্ত লবণ! তাই ফাস্ট ফুড কেনার টাকা ওর হাতে দেয়ার আগে এখন থেকে দ্বিতীয়বার ভাববেন! 

৫. ভিটামিন আর মিনারেল নিয়ে ভাবনা: 

এই বয়সটায় কিছু কিছু ভিটামিন আর মিনারেলের চাহিদা থাকে সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে- আয়রণ, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন এ আর ভিটামিন ডি। একেকটার কাজ একেক রকম। খুব স্বল্পমাত্রায় দরকার হয় এগুলো ঠিকই, কিন্তু একটু অভাব হলে পরিণাম হয় মারাত্মক! এ সময়ের ঘাটতি ভুগাতে পারে একেবারে মৃত্যু পর্যন্তও! দুর্বলতা, মনোযোগহীনতা, গাইনি সমস্যা, থাইরয়েড সমস্যা সহ আরো বড় বড় রোগে বাসা বাঁধতে পারে শরীরে, যদি এগুলোর ঘাটতি থেকে যায়। তবে আশার কথা এই যে, প্রতিদিন ঠিক পরিমাণে খাবার খেলে আর কিছুটা শাক, সবজি, ফল, দুধ আর একটা ডিম সাথে থাকলে এমনিতেই এগুলোর চাহিদা সাধারণত পূরণ হয়ে যায়! 

তবু কিন্তু আয়রনের ঘাটতি হতে পারে মেয়েদের, বুঝতেই পারছেন তা মাসিকের কারণে। মাসিকের দিনগুলোতে প্রতিদিন একটি মেয়ের এক মিলিগ্রাম করে আয়রন চলে যায়। মেয়েদের আয়রনের দৈনিক চাহিদা  প্রায় ১৫ মিলিগ্রামের বেশি। এই বাড়তি আয়রন পেতে ওকে নিয়মিত সবুজ শাক, মাংস, কলিজা, ডিম ইত্যাদি খেতে দিন। একটি সহজ টোটকা বলে দেই, ওর খাবার প্লেটে প্রতিদিন এক টুকরা লেবু বা টক ফল রাখবেন, কারণ ভিটামিন সি আয়রণ শোষণ করতে সাহায্য করে। আর খেয়াল রাখবেন মেজর মিলের সাথে চা আর দুধ না দিতে, কেননা এগুলো আয়রনের শোষণ কমিয়ে দেয়। তবু ওভার ফ্লো এর কারণে আপনার মেয়ের রক্তস্বল্পতা দেখা দিলে সাপ্লিমেন্ট দিতে পারেন ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে।

তাছাড়া এ বয়সে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মিনারেল হল ক্যালসিয়াম। শারীরিক বৃদ্ধির জন্য এবং মজবুত হাড়ের জন্য ওদের প্রচুর ক্যালসিয়াম চাই, অন্তত ১৩০০ মিলিগ্রাম। এক গ্লাস দুধে থাকে ৩০০ মিলিগ্রাম ক্যালশিয়াম। তাই কিশোরীর মাকে ভাবতে হবে দৈনিক এক গ্লাস দুধের পাশাপাশি ক্যালশিয়ামসমৃদ্ধ অন্যান্য খাবারও যেন মেয়ে খায় যাতে তার ক্যালশিয়ামের পূর্ণ চাহিদা মেটে। আজকের কিশোরী মাত্রই আগামী দিনের মা; সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়াতে প্রয়োজন হবে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়ামের। তাই শেষ বয়সে ওদের অস্টিওপোরোসিস বা হাড় ক্ষয়ের ঝুঁকি কিন্তু বেশি। তা ছাড়া হাড়ের সর্বোচ্চ ঘনত্ব তৈরি হয়ে যায় ২১ বছরের আগেই, এরপর আর বাড়ে না। তাই মজবুত হাড়ের জন্য এ বয়সেই খেতে হবে দুধ, দুগ্ধজাত খাবার যেমন: দই, পনির, কাঁটাযুক্ত ছোট মাছ, পাতাওয়ালা সবুজ সবজি ইত্যাদি। সাথে প্রতিদিন একটু হলেও রোদে যাওয়া জরুরি, কারণ রোদ শরীরে ভিটামিন ডি তৈরি হতে সাহায্য করে, আর ভিটামিন ডি সাহায্য করে ক্যালসিয়ামের শোষণ আর কাজে।

৬. পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম:

পর্যাপ্ত ঘুম সব বয়সের মতোই এই বয়সেও দরকার। দৈনিক ৬-৮ ঘন্টা ঘুম ওর প্রয়োজন, এর কম বা বেশি কোনোটাই ঠিক না। 

আরেকটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, ঘুমটা যাতে রাতেই পূর্ণ হয়। দেরিতে ঘুমিয়ে দেরিতে ওঠা, কিংবা সকালে উঠার জন্য স্কুল থেকে ফিরে সারা বিকাল ঘুম, কোনোটাই উচিত না। গার্জিয়ানদের লক্ষ্য রাখতে হবে, ঘুমের সাইকেল যাতে ঠিক থাকে। দিনের অন্য সময়ে ঘুম পুষিয়ে নিলে ক্লান্তি দূর হলেও হবে হরমোনাল ইমব্যালান্স। কারণ আমাদের দেহ ঘড়ি সূর্যালোকের সাথে সামঞ্জস্য মেনে চলে। 

পরীক্ষার কারণে এক দুদিন রাত জাগা হতে পারে। কিন্তু নিয়মিত দেরি করা শরীরের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর। যদি দেখেন ও অকারণে দেরি করছে ঘুমাতে, তাহলে বুঝবেন এটা ইলেকট্রনিক ডিভাইসের কুপ্রভাব। টিভি, মোবাইল, কম্পিউটার এগুলো থেকে বের হওয়া আলো, বিশেষ করে ব্লু লাইট আমাদের স্বাভাবিক ঘুমের সাইকেলের বারোটা বাজিয়ে দেয়! তাই অন্তত রাত দশটার ভিতর সব ডিভাইস ব্যবহার অফ করে দিন। নিজেও সুস্থ থাকতে এই অভ্যাস করুন।

৭. আরো দরকারি ব্যাপার স্যাপার:

বাড়ন্ত বয়সে খাবারের সাথে সাথে শারীরিক পরিশ্রম বাড়ানোও খুব প্রয়োজন, নাহলে যা পুষ্টি উপাদান ভেতরে গেল, তার পূর্ণ ব্যবহার শরীর করতে পারবে না। এজন্য প্রতিদিন হাঁটা বা এক্সারসাইজের অভ্যাস করতে হবে। আজকার ইউটিউবে বা বিভিন্ন মোবাইল এপের মাধ্যমে সহজ ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজের কৌশল শেখা যায়, যা করলে ঘামও ঝরে, শরীরও ভালো থাকে।

টিনএজারদের যাবতীয় সমস্যার মধ্যে অন্যতম হল ব্রণ ওঠা ও চুল পড়া। এ দুটি সমস্যার সমাধান করতে হলে পানি খেতে হবে প্রচুর পরিমানে, সাথে খেতে হবে ফাইবার জাতীয় খাবার, যেন পেট পরিষ্কার থাকে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকাটাও এক্ষেত্রে জরুরি।

এ বয়সে একটা অদ্ভুত মানসিক রোগ কিছু টিনএজারদের মধ্যে দেখা যায় যার নাম- ইটিং ডিসঅর্ডার। এটা বিভিন্ন প্রকারের হতে পারে। ডিপ্রেশনের কারণে কেউ খুব বেশি খায় বা কেউ একদম খায় না। আবার কেউ বেশি খেয়ে জোর করে বমি করে ফেলে! মা হিসেবে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, সন্তানের এমন সন্দেহজনক আচরণ আছে কিনা।

এগুলো বিষয় ছাড়াও সঠিক পুষ্টি নিশ্চিত করতে প্রয়োজন ভালো বন্ধু নির্বাচন। জ্বী, ঠিক পড়ছেন! একজন বন্ধু সরাসরি যেমন আপনার সন্তানের খাদ্যাভ্যাসে প্রভাব ফেলতে পারে, আবার পরোক্ষভাবে ওর সঙ্গ আপনার সন্তানের মানসিকতা, হরমোন সহ অন্যান্য সব দৈনন্দিন অভ্যাসেরও পরিবর্তন ঘটাতে সক্ষম! এই বয়সটা যে কত গুরুত্বপূর্ণ তা প্রতিটি মায়েরই ভালো বোঝার কথা। 

তাই এ সময়ে সন্তানের খেয়াল রাখুন খুব বেশি। ওকে শিশুর মত করে পালতে হবে না, সব কিছুতে হস্তক্ষেপ করতে হবে না। কিন্তু নিজের পায়ে দাঁড়াতে শেখার এবং একই সাথে পা পিছলানোর এ সময়টায় আপনি ওর বন্ধু হয়ে অবশ্যই পাশে থাকবেন। নিজের মায়ের চেয়ে ভালো বন্ধু আর কে হতে পারবে?

ছবিঃ Freepik

(ফারিহা মুশাররাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অফ নিউট্রিশন এন্ড ফুড সাইন্সের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী)

লেখাটি কি আপনার উপকারে এসেছে?
হ্যানা