এই সপ্তাহটি বেশ গুরুত্বপূর্ন। আপনি গর্ভধারণ করেছেন কি-না, তা ইতিমধ্যে না জেনে থাকলে এই সপ্তাহে পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হতে পারবেন। যদি গর্ভবর্তী হয়ে থাকেন, তাহলে আপনার গর্ভধারণের এক মাস হয়ে যাচ্ছে। আপনি প্রথম ট্রাইমিষ্টারে আছেন। এটা বাচ্চার বর্ধণের জন্য গুরুত্বপূর্ন সময়।

আপনার যা পরিবর্তন আসবে

এই সময়ে এসে আপনার শরীরে প্রেগন্যান্সি হরমোন (Pregnancy Hormone) পুরোদমে সক্রিয়। গর্ভধারণের প্রাথমিক যে লক্ষণগুলো দেখা যায়, এই হরমোনই তার জন্য দায়ী। ক্লান্তি, মাথা ঘোরানো, বমিভাব, অজ্ঞান হয়ে পড়া, অকারণে দুশ্চিন্তা সবকিছুই এ থেকে হয়। এই সপ্তাহে যে পরিবর্তনগুলো আপনার চোখে পড়বে-

  • মেজাজের উঠানামা (Mood Swing), অকারণে মন খারাপ হওয়া, রাগ হওয়া। ভালো লাগা কিংবা খারাপ লাগা উভয়ই তীব্র অনুভূত হয়।
  • যে কোন জিনিসের গন্ধ তীব্র মনে হতে পারে। ঘ্রানশক্তি সংবেদনশীল হতে পারে।
  • খাবারে গন্ধ লাগতে পারে। যে খাবারগুলো আগে খেতে ভালোবাসতেন, সে খাবারে অনীহা আসতে পারে।
  • সাধারন কাজেও অনেকে ক্লান্ত হয়ে পড়তে পারেন।
  • শারীরিক মানসিক উভয়মুখী পরিবর্তনে চাপ অনুভব করতে পারেন।

বাচ্চার বেড়ে উঠা

গর্ভধারণের চতুর্থ সপ্তাহে এসে খুব দ্রুত ভ্রুনের উন্নতি হতে থাকে। নিষিক্ত ডিম্বানুটি জরায়ুতে স্থাপিত হওয়ার পর থেকে দ্রুতই কোষ বিভাজন চলতে থাকে। এই সপ্তাহে এসে মায়ের গর্ভে গর্ভথলে (Amniotic Sac) গঠিত হয়। এই থলে ভর্তি থাকে পানিতে, যা বাচ্চাকে পরবর্তী নয় মাস ধরে সুরক্ষা দেবে। গর্ভথলির ভিতর ভ্রূণ বা ইয়োক স্যাক (Yolk Sac) রক্ত এবং পুষ্টির যোগান দেয়। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে প্ল্যাসেন্টা (গর্ভকালীন সময় জরায়ুর দেয়ালের সাথে ফেটাসের সংযোজক নালী) তৈরী হবে।

এ সময় ভ্রুনটি ১.৯৮ মিলিমিটার লম্বা হয়। তা খুব ছোট, একটা আপেলের বিচির সমান। কিন্তু এই ছোট্ট প্রাণটা ঘিরে নানা রকম কর্মযজ্ঞ শুরু হয়ে গেছে। হাত এবং পায়ের গঠন শুরু হয়েছে, যদিও এখনো পরিস্কার বোঝা যাবে না।

এই সপ্তাহের যে উপসর্গটি নিয়ে আপনি চিন্তিত হতে পারেন তা হলো স্পটিং(spotting) অর্থাৎ, ফোঁটা ফোঁটা রক্ত যাওয়া খুবই অল্প পরিমাণে। এটি হতে পারে আপনার মাসিকের তারিখের আগে কিংবা একই তারিখের সময় কিংবা কিছুটা পরে। অনেক ক্ষেত্রে এই রক্তের পরিমাণ এতই কম থাকে যে , তা অনেকে খেয়াল-ই করেননা।

কেন হয় এই Spotting? ফারটিলাইজেশনের পর ডিম্বাণু এবং শুক্রাণু মিলে গঠিত এমব্রায়ো যখন জরায়ুর দেওয়ালে গিয়ে অবস্থান নেয়,তখন সে কিছু ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র রক্তানালী ছেদ করে যায়, এই রক্তনালী ছিড়েই রক্তক্ষরণ হয়৷ অনেকের ক্ষেত্রে আবার হয়না এই স্পটিং। তাই, স্পটিং দেখলে আপনার ডাক্তারকে জানান। কারণ অনেক ক্ষেত্রে তা অন্যকোন রোগের উপসর্গ হিসেবেও এটি হতে পারে।

এই সপ্তাহে আপনার জন্য টিপস

বাড়ীতে প্রেগন্যান্সি কিটস কিনে পরীক্ষা করুন। এটি প্রস্রাবে প্রেগন্যান্সী হরমোনের উপস্থিতি পরীক্ষা করে এবং ইতিবাচক ফল পেলে ধরে নেয়া যায়, আপনি গর্ভধারণ করেছেন। আপনার পিরিয়ড যদি আনিয়মিত হয়ে থাকে, তবে নেতিবাচক ফলাফল পেতে পারেন। সেক্ষেত্রে কিছুদিন অপেক্ষা করে আবার টেস্ট করুন।

বাসায় বসে পরীক্ষার ক্ষেত্রে কয়েকটি কারণে ভুল ফল আসতে পারে, প্রথমত: যদি আপনার মাসিক অনিয়মিত হয়ে থাকে। দ্বিতীয়ত: যদি আপনি খুব তাড়াতাড়ি (যেমন মাসিক মিস হওয়ার ১ মাস পূর্ণ হওয়ার আগেই) টেস্ট করেন। এছাড়াও অনেকের ক্ষেত্রে সকালে প্রথম প্রস্রাবের ওপর করা টেস্ট সঠিক ফল দেয় বলে জানা গেছে। যাই হোক, কয়েকটি স্ট্রিপ দিয়ে টেস্ট করলে আপনি গর্ভধারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারবেন।

বাসায় বসে পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে আপনার উচিত ডাক্তার বা গাইনিকোলজিস্টের সাথে পরামর্শ করা। ডাক্তার হয়তো আরো নিশ্চিত হওয়ার জন্য প্রস্রাব বা রক্ত পরীক্ষা করতে দিতে পারেন।

  • আপনার বাচ্চার জন্য যেহেতু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন এই সময়টি, এখন থেকেই স্বাস্থ্যকর জীবনাচরণ মেনে চলুন। পুষ্টিকর খাদ্যাভাস, ব্যায়াম দৈনন্দিন রুটিনের অংশে পরিণত করুন।
  • আগে হুটহাট যেসব ওষুধ খেতেন- জ্বর, এলার্জি, পেট খারাপের জন্য, সেগুলোর ব্যবহারে সতর্ক হোন। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন ওষুধ খাবেন না।
  • মুড সুইং (মেজাজের ওঠানামা) খুব স্বাভাবিক এই সময়। স্বামীর সাথে এ নিয়ে কথা বলুন। আপনার ভালো লাগা- খারাপ লাগা শেয়ার করুন।
  • গাইনোকলজিস্টের সাথে দেখা করুন।
  • প্রচুর বিশ্রাম নিন।
  • যদি আপনার পূর্বের বার বার গর্ভপাতের ঘটনা থাকে,কিংবা বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসার পর এই গর্ভাবস্থা হয়ে থাকে, তবে এই সপ্তাহ থেকেই অবশ্যই অবশ্যই ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ রাখা খুবই জরুরি।

বাচ্চার বাবার জন্য টিপস

গর্ভধারণের এই সময়টা একজন মায়ের জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ন। বিশেষ করে যদি এটা প্রথমবার গর্ভধারন হয়ে থাকে, তাহলে তা মায়ের জন্য যেমন নতুন, আপনার জন্যও তাই। আপনার স্ত্রীর প্রতি খেয়াল রাখুন। তাকে তার শারীরিক মানসিক পরিবর্তনগুলোর সাথে খাপ খাইয়ে নিতে সহযোগীতা করুন। আপনার সন্তানের জন্ম দিবেন তিনি, কাজেই আপনার দায়িত্ব তাকে যাবতীয় সহযোগীতা করা। কাজে সহযোগীতা করুন, বিশ্রাম নেবার সুযোগ করে দিন।

গর্ভধারণে মুড সুইং সম্পর্কে জানুন। এই সময় আপনার স্ত্রীর মন খারাপ হওয়া, কারণে-অকারণে কান্না করা অস্বাভাবিক কিছু না। তাকে এই নিশ্চয়তা দিন যে আপনি সব সময় তার পাশে আছেন। গর্ভধারণজনিত শারীরিক অসুবিধায় আপনার পক্ষে কিছু করা সম্ভব না হলেও, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে কাজটি আপনি এই সময় করতে পারেন তা হলো তাকে চিন্তামুক্ত ও হাসিখুশী রাখা।

তথ্যসূত্র

১. হোয়াট টু এক্সপেক্ট

লেখাটি রিভিউ করেছেন –

ডাঃ মাশরুরা মাহজাবিন
MBBS
General Practioner, Trained Mental health counselor

লেখাটি কি আপনার উপকারে এসেছে?
হ্যানা