সপ্তম সপ্তাহে এসে শারীরিক-মানসিক অনেক রকম পরিবর্তন এসেছে হবু মায়ের। এসময় ঠিক প্রেগন্যান্ট না দেখালেও ওজন কিছুটা বাড়তে পারে। অনেকের আবার কমেও যায়, যা পরবর্তীতে আবার বাড়ে। ডাক্তার না দেখিয়ে থাকলে এখন দেখানোর সময়। যা যা পরীক্ষা নীরিক্ষা প্রয়োজন তিনি করবেন। এই সময় থেকে গর্ভধারণের শেষ পর্যন্ত ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে থাকা উচিত।

আপনার শরীরে যা পরিবর্তন আসবে

বমিভাব, মাথা ঘোরানো সহ গর্ভাবস্থার সব লক্ষণ আপনার মধ্যে বিদ্যমান। এগুলোর মাত্রা এক একজনের জন্য কম-বেশী হতে পারে। যেহেতু আপনার পেট আগের মতোই সমতল, তাই ১২ সপ্তাহের আগে গর্ভধারণের খবর কাউকে জানাতে না চাইলে সমস্যা নেই, কেউ দেখে বুঝতে পারবে না। এসময় যেসব শারীরিক উপসর্গ আপনাকে ভোগাবে তার তালিকা দেয়া হলো:

  • ক্লান্তিবোধ
  • মাথাব্যাথা
  • ঘনঘন প্রস্রাব
  • স্তনের পরিবর্তন
  • ঘনঘন মুখে থু থু জমা হওয়া
  • হজমে সমস্যা
  • খাবারে অনীহা অথবা আগ্রহ

এই সময়ে সার্ভিক্যাল ক্যানাল (Cervical Canal) বন্ধ করে দেয়ার জন্য সার্ভিক্সে একধরনের প্ল্যাগ জমা শুরু হয়েছে, যেটি ভ্রুন থাকা জরায়ুটিকে সুরক্ষা দেবে। স্বাভাবিক প্রসবের সময় এই প্ল্যাগ সময় খুলে যায়।

গর্ভাবস্থায় শরীর অসুখ বিসুখের ব্যাপারে সংবেদনশীল থাকে, তাই হাম, রুবেলাসহ যেকোন সংক্রমনযোগ্য রোগীর সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতেচেষ্টা করুন। বাসায় বিড়াল থাকলে, বিড়ালের ট্রে পরিস্কার করা থেকে বিরত থাকুন। ট্যাক্সোপ্লাসমোসিস (Toxoplasmosis) নামক অনুজীবের সংক্রমন হতে পারে।

বাচ্চার বেড়ে উঠা

এই সময়ে ভ্রুণের আকার একটা ছোট শীমের বিচির সমান। আকার ১ সেমি। এই ছোট ভ্রুণটি খুব দ্রুত বাড়ছে। ইতিমধ্যে এটি মানুষের আকার ধারন করেছে। ছোট্ট হাত, পায়ের অবয়ব এসেছে। হৃদস্পন্দন এসেছে।

এই সপ্তাহেই আপনার চিকিৎসক একটি সনোগ্রাফী করতে পারেন, যা নিশ্চিত করবে ভ্রূণের মাঝে হৃদস্পন্দন এসেছে কিনা? কিছু কিছু অবস্থা থাকে যেখানে গর্ভাবস্থায় ভ্রূণে হৃদস্পন্দন থাকেনা। সেক্ষেত্রে করণীয় চিকিৎসক বলবেন। মনকে শান্ত রাখুন, ইতিবাচক চিন্তা দিয়ে। এই সময় এর লেজের মতো ক্ষুদ্র একটা অংশও আছে, যেটি খুব দ্রুত মিলিয়ে যাবে।

এছাড়া মুখ এবং জিহবার গঠন শুরু হয়েছে। কিডনী তৈরী হয়েছে, যা এরি মধ্যে নিস্কাশনের কাজ শুরু করে দিয়েছে। এই পর্যায়ে ভ্রুণটি প্রস্রাব করা শুরু করবে, যা এমনিয়োটিক ফ্লুইডে জমা হবে।

এই সপ্তাহে আপনার জন্য টিপস

  • প্রেগন্যান্সির ডিউ ডেট ক্যালকুলেটর দিয়ে আপনি নিজের বের করতে পারবেন আপনার প্রসবের সম্ভাব্য সময়।
  • আপনি হয়ত ইতোমধ্যে ধাত্রীবিদ্যা বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাথে দেখা করেছেন বা প্রথমবার দেখা করার কথা ভাবছেন। আপনার যা যা জিজ্ঞেস করার আছে , সব ছোট নোটবুকে টুকে নিন। সব সময়মতো মনে নাও পড়তে পারে।
  • আপনার পরিবারের অন্য কাছের সদস্যদের রোগের ইতিহাস বিস্তারিত ডাক্তারকে জানান। যেমনঃ উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, মিসক্যারেজ।
  • খাবারে অনীহা থাকলে চেষ্টা করুন খাবারে বৈচিত্র্য আনতে। যেমন প্রোটিনের উৎস হিসেবে মাছ খেতে না পারলে মাংশ/ডিম খেতে চেষ্টা করুন। দুধ সরাসরি খেতে পারলে, পায়েস বা ফ্রুটস স্মুদি বানিয়ে খান।
  • এখনো পর্যন্ত যদি সক্রিয় জীবনযাপন শুরু না করে থাকেন, আজই শুরু করুন।
  • যা কিছু আপনি খাবেন, তার প্রভাব সরাসরি ভ্রুণের উপর পড়বে। তাই পুষ্টিকর খাদ্যাভাস বজায় রাখুন।
  • হরমোনের তারতম্যের কারনে ত্বকে পরিবর্তন আসতে পারে। যেমন ব্রন, গলায়-কপালে-ঘাড়ে কালচে দাগ। সন্তান প্রসবের পর  এসব ঠিক হয়ে যায়।
  • কাপড় আঁটসাঁট হয়ে এলে পরিবর্তন করুন। আরামদায়ক, ঢিলাঢালা মাতৃত্বকালীন পোষাক বেছে নিতে পারেন।

মুড সুইং এর সময় চেষ্টা করুন ইতিবাচক মনোভাবসম্পন্ন মানুষের আশেপাশে থাকতে, যারা আপনাকে কথায় কাজে উৎসাহ যোগাবে। নেতিবাচক ব্যক্তিত্ব এড়িয়ে চলুন। সর্বোপরি দুঃচিন্তামুক্ত থাকার চেষ্টা করুন।

লেখাটি রিভিউ করেছেন –

ডাঃ মাশরুরা মাহজাবিন
MBBS
General Practioner, Trained Mental health counselor

লেখাটি কি আপনার উপকারে এসেছে?
হ্যানা