সিরিজ ইনডেক্স
১. হোমস্কুলিং এর ভালমন্দ
২. আমার হোমস্কুলিং এর আদ্যোপান্ত – প্রথম পর্ব
৩. হোমস্কুলিং ও ইসলাম শিক্ষা
৪. হোমস্কুলিং ও আউটডোর ট্রিপ
৫. হোমস্কুলিংঃ করণীয় ও বর্জণীয়
৬. হোমস্কুলিংঃ অক্ষর শেখানো
৭. হোমস্কুলিং কারিকুলাম যেভাবে তৈরি করবেন?

হোমস্কুলিংঃ করনীয়, বর্জনীয়

১. সাত বছর বয়সের আগে পড়া = খেলা। খেলায় যেমন কোন চাপ নেই, জোরাজুরি নেই, পড়াশোনাটাও এই বয়সের আগে তেমন। আপনার প্রচণ্ড রাগ এবং হতাশ লাগলেও কোন জোর করবেন না পড়ায়। এতক্ষণ লাগে কেন এই সহজ জিনিসটা বুঝতে, অমুক এতকিছু শিখে ফেলেছে আর তুমি কোথায় পড়ে আছো, এরকম কথা ওর আত্মবিশ্বাসকে পুরোপুরি ভেঙ্গে দেয়ার জন্য যথেষ্ট।

২.বাচ্চাকে অন্য বাচ্চার সাথে তুলনা করবেন না। ওর সামনে তো নাই, নিজের মনে মনেও না। অমুক ভাবির বাচ্চা একশ পর্যন্ত গুণতে পারে, আপনার বাচ্চা দশ পর্যন্তও পারে না এটা যেন আপনাকে আতংকিত না করে। এর মানে হলো আপনার বাচ্চা ম্যাথের চেয়ে অন্য কিছুতে আগ্রহ বেশি পাচ্ছে, সময় ও মনোযোগ বেশি দিচ্ছে, এবং অমুক ভাবির বাচ্চার চেয়ে ঐ বিষয়ে সে বেশি ভালো। আপনাকে শুধু সেটা খুঁজে বের করতে হবে। বাচ্চার যেখানে আগ্রহ সেখানে তাকে ডানা মেলতে দিন। এভাবেই হোমস্কুলিং হয়, এভাবেই বাচ্চারা শেখে। নিজেদের প্রতি, বাচ্চার প্রতি বিশ্বাসের অভাব সফল হোমস্কুলিং এর প্রধান অন্তরায়।

৩. কোনো বাঁধাধরা কারিকুলাম ফলো না করা ভালো। কোন বয়সে কী শেখানো উচিত, কোন পড়া শেষ করতে কত সময় নেয়া উচিত, সাবজেক্ট কী কী থাকবে, এপ্রোচ কিরকম হবে সবই আপনার আর আপনার বাচ্চার ব্যপার।

৪. সাত বছর বয়সের আগে বই খাতা নিয়ে পড়াশোনার চেয়ে জগত চেনা, বিভিন্ন স্কিল ডেভেলপ করা, নৈতিক ভিত্তি গড়ে তোলা, মানসিক বিকাশ অনেক অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। পার্কে যেয়ে কোনটা কোন গাছ, কোনটা কী ফুল চেনার চেয়ে নিরিবিলি বসে আকাশ দেখা, পাখি দেয়া আর সবুজে বুক ভরে শ্বাস নেয়া অনেক অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বিশ পর্যন্ত গুনতে শেখার চেয়ে ঘর ঝাড়ু দিতে, মুছতে পারা এই বয়সের জন্য অনেক বড় লাইফ স্কিল।

৫. ফাইন মোটর স্কিল বাড়ানোর জন্য আপনার অনেক ইনোভেশন আর নেটের খাজনার চেয়ে বাজনা বেশি টাইপ হাজার হাজার আইডিয়া দরকার নেই। রান্নার কাজে, ঘরের কাজে যতটা সম্ভব বাচ্চার হেল্প নিন, ফাইন মোটর স্কিল ওতেই ঢের হয়ে যাবে। 

৬. বাচ্চার জীবন পড়াময় করে ফেলবেন না সাত বছর বয়সের আগে। এই বয়সে অনেক বেশি খেলা(ডিভাইস না, ফিজিকাল এক্টিভিটি), একটু একটু পড়া।The key is, “later is better”. সিরিয়াস পড়াশোনা দেরীতে শুরু করলেই বাচ্চারা বেশি শেখে। খুব দ্রুতই তারা ‘এগিয়ে থাকা’ বাচ্চাদের ধরে ফেলে। সাত বছর বয়সের আগে শুধু সহজ বই নিজে নিজে রিডিং পড়তে শেখাই যথেষ্ট। দুনিয়ার ফল, ফুল, পশু ,পাখির নাম আর এটা ওটা শেখা, সবই ঐচ্ছিক। এমন কোন উপকার নেই এগুলো শিখে।

৭. ছয় সাত বছরের আগে হিফযের জন্য সম্ভবত বাচ্চারা তৈরি হয় না। এর আগে শুধু কুরআনের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলা আর রিডিং পড়া বা নজরানা চালু করাই মূল কাজ। নজরানা খুব ভালোমতো চালু না হওয়া পর্যন্ত বাচ্চাকে হিফয শুরু করাবেন না। কুরআনের প্রতি প্রচণ্ড ভীতি চলে আসার সম্ভবনা প্রায় শতভাগ।

৮. ইসলাম শেখানোর ক্ষেত্রে প্রায়োরিটি হলো, প্রথমে আল্লাহকে চেনানো বিভিন্ন দৈনন্দিন কাজের মধ্য দিয়ে। আল্লাহর বিভিন্ন রহমতের নিদর্শন, আল্লাহ আমাদের ভালোবাসেন এগুলো তুলে ধরা। এরপর কাজ হলো জান্নাতের বিবরণ বেশি বেশি তুলে ধরা। এটা আল্লাহ ‘ভালো’ দের জন্য তৈরি করেছেন। কিন্তু এখনই তাকে খুব জোরেসোরে ফরয, ওয়াজিব, হারাম ইত্যাদি বোঝানো যাবে না। জাহান্নামের কথাও আসবে আরো পরে। অনেক গল্প বলতে হবে। নবী রাসূলদের কাহিনী, সালেহ ব্যক্তিদের কাহিনী ইত্যাদি। কিন্তু আল্লাহর শাস্তির কথা গল্পের যে অংশে আসবে সেখানে খুব সতর্ক থাকতে হবে। তাকে বুঝাতে হবে যে অমুক সম্প্রদায় বা তমুক লোক খুব খারাপ কাজ করেছিল, তারা ঘৃণার পাত্র, তাদের ধ্বংস করে আল্লাহ বাকিদের রক্ষা করেছেন/অনুগ্রহ করেছেন। আল্লাহর ব্যপারে বাচ্চার মনে যেন স্নেহশীল দয়ালু ধারণাই তৈরি হয় আগে।

সাত বছর থেকে ইবাদতের খুঁটিনাটি শেখাতে হবে। এর আগে না। 

বিভিন্ন দুয়া শেখানো, সুরাহ শেখানো, বাথরুমে ঢোকার দুয়া, ঘুমানোর দুয়া সবই অপশনাল এই বয়সের আগে। এগুলো শিখালেও অনেক উপকার নেই, না শিখালেও কোন ক্ষতি নেই। ঈমান তৈরিটাই আসল। কোনোভাবেই এই বয়সের আগে আল্লাহর শাস্তির ব্যপারে বাচ্চাকে কোন ধারণা দেয়া উচিত হবে না।

আমরা যখন কাউকে খুব ভালোবাসি, সেই ব্যক্তিটিও যেন আমাদের ভালোবাসে সেজন্য যা করা লাগে, যত কঠিনই হোক, আমরা সেটা করার জন্য তৈরি থাকি। একারণে প্রথমেই হালাল- হারাম, দায়িত্ব- কর্তব্যের প্রসঙ্গ বাচ্চার সামনে না এনে শুধু একতরফাভাবে আল্লাহর গুণাবলী, দয়া, অনুগ্রহ, ভালোবাসাই বুঝিয়ে যেতে হবে। সে যখন আল্লাহকে ভালোবাসবে, নিজে থেকেই ইবাদতে আগ্রহী হবে ইন শা আল্লাহ।

সম্পাদনায়: হাবিবা মুবাশ্বেরা

লেখাটি কি আপনার উপকারে এসেছে?
হ্যানা