আজকাল অনেকেই পিঠ ব্যাথার (back pain) সমস্যায় ভোগেন। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই আমাদের লাইফস্টাইল এর জন্য দায়ী। অনেকের গর্ভকালীন সময়ে ব্যাক পেইন শুরু হয়, অনেকের আবার সন্তান প্রসবের সময়- পেইন ম্যানেজমেন্টের অংশ হিসেবে মেরুদন্ডের নীচের দিকে এপিডিউরাল নেয়ার ফলে ব্যাক পেইন হতে পারে।

একবার ব্যাক পেইনের সমস্যা শুরু হলে, সম্পূর্নভাবে এর নিরাময় সম্ভব না হলেও, নিয়ন্ত্রন সম্ভব। অনেকে ব্যাথার ওষুধ খেয়ে কন্ট্রোল করতে চেষ্টা করেন। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে ব্যাথার ওষুধ কিডনী ড্যামেজ করে ফেলার মতো মারাত্মক অবস্থার সৃষ্টি করতে পারে। তাই ওষুধের প্রতি নির্ভরশীল না হয়ে ইয়োগা বা যোগ ব্যায়ামের মতো ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজের মাধ্যমে ব্যাক পেইন নিয়ন্ত্রন করার চিন্তা করাই বুদ্ধিমানের কাজ।

ইয়োগা কোচ জেন হিলম্যান ব্যাক পেইন কমানোর পাঁচটি টিপসের কথা বলেছেন। যেগুলো আসলেই কার্যকর ব্যাক পেইন নিয়ন্ত্রনের ক্ষেত্রে। এখানে আমরা টিপসগুলো দেখবো।

টিপস #১ সচেতনভাবে দীর্ঘ শ্বাস নিন

সবসময় শ্বাস-প্রশ্বাসের দিকে খেয়াল রাখুন। শ্বাস নেওয়ার সময় দীর্ঘ লম্বা শ্বাস নেবেন। বুকভরে লম্বা শ্বাস নেয়ার অভ্যাস বজায় রাখুন। এটা শরীরকে স্ট্রেস ফ্রি রেখে ব্যাকপেইন নিয়ন্ত্রনে সহায়ক হবে। এভাবে শ্বাস নেওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

টিপস #২ এক্টিভ থাকুন

আমরা বেশীর ভাগ কাজ বসে করি। পড়াশুনা, অফিস, বাচ্চার টেইক কেয়ার করা অনেকটা সময় আমরা বসে কাজ করি। মুভমেন্ট যেরকম হওয়া উচিত, সেটা হয় না। এতে মাংসপেশিতে স্থবিরতা চলে আসে, দুর্বল হয়ে পড়ে। সহজেই ব্যাক পেইনের মতো সমস্যার আবির্ভাব ঘটে। যতদূর সম্ভব সক্রিয় থাকার চেষ্টা করতে হবে। অফিসে কিংবা কাজের ফাঁকে সুযোগ পেলেই একটু হাঁটাহাটি করে নিন। বসে থাকতে হলেও কিছু মুভমেন্ট করুন যাতে, শরীরে জড়তা চলে না আসে। স্থবিরতা ব্যাক পেইনের প্রধান কারন।

ব্যকপেইন থেকে মুক্তি চাইলে প্রতিদিনের জীবনযাত্রার ধরনে পরিবর্তন আনতে হবে। যতবেশী সম্ভব সক্রিয় থাকাটা মূল চাবিকাঠি।

টিপস #৩ সঠিক দেহভঙ্গী বজায় রাখুন

বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই আমাদের বসার বা দাঁড়াবার ভঙ্গি ঠিক থাকে না। আমরা অনেকেই কুঁজো হয়ে বা হেলান দিয়ে অতিরিক্ত বাঁকা হয়ে বসি। অথবা হাঁটার সময় কুঁজো হয়ে ঝুঁকে হাঁটি। যেগুলোর কোনটাই ঠিক নয়। বসা বা দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে মেরুদন্ড সোজা রাখাটা ব্যাক পেইন ঠেকিয়ে দেয়।

টিপস# ৪ সেলফ ম্যাসাজ করুন

পিঠে, ঘাড়ে বা কোমরে ব্যাথার সমস্যা থাকলে নিজেকে নিজে ম্যাসাজ খুব ভালো কাজ করে। চিত হয়ে রিলাক্স হয়ে শুয়ে পড়ুন। পিঠে মেরুন্ডের নীচে দিতে পারেন টেনিস বল অথবা রোল করে ভাঁজ করা তোয়ালে। এবার দুইহাতের আঙ্গুল দিয়ে আলতো করে ম্যাসাজ করা শুরু করুন কানের পিছনে, ঘাড়, গলার পশ্চাতভাগ। নিয়মিত ম্যাসাজ করার অভ্যাস থাকলে ব্যাক পেইনে আরাম পাবেন।

টিপস #৫ নিয়মিত যোগ ব্যায়াম (Yoga) করুন

প্রতিদিন কিছু সময় রাখুন যোগ ব্যায়াম বা ইয়োগা করার জন্য। ইয়োগার মুভমেন্টগুলো, শরীরকে নমনীয় (Flexible) করে, শরীরের জড়তা দূর করে আর ব্যাক পেইনের মতো শারিরীক সমস্যাকে দূরে রাখতে সাহায্য করে। ইয়োগা শুরু করলে প্রথমেই জটিল কিছু করতে যাবেন না। অল্প সময়ে সহজ ও হালকা মুভমেন্ট দিয়ে শুরু করুন। আস্তে আস্তে সময় বাড়ান। ইউটিউবের সাহায্য নিতে পারেন। ইয়োগার একটা সুবিধা হচ্ছে, কিছু ব্যায়াম আপনি অফিসে, বাসায় যে কোন জায়গায় থেকে করতে পারেন।

ব্যকপেইন থেকে মুক্তি চাইলে প্রতিদিনের জীবনযাত্রার ধরনে পরিবর্তন আনতে হবে। যতবেশী সম্ভব সক্রিয় থাকাটা মূল চাবিকাঠি। সঠিক উপায়ে শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়া, সঠিক দেহভঙ্গী বজায় রাখা এবং ইয়োগা এগুলোকে প্রতিদিনের জীবনের অংশে পরিনত করতে পারলে অনেকাংশে ব্যাক পেইন নিয়ন্ত্রন সম্ভব। কিন্তু দীর্ঘসময় তীব্র ব্যাথা থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

ছবি কৃতজ্ঞতা: ফ্রিপিক

লেখাটি কি আপনার উপকারে এসেছে?
হ্যানা