‘গর্ভাবস্থায় শারীরিক সম্পর্ক করা যাবে কিনা”, “কিভাবে করলে ক্ষতির সম্ভাবনা নেই”- হবু মা-বাবার মনে এ নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও সঠিক উত্তরটি অনেকেই জানেন । কেউ জানার চেষ্টা করলেও নির্ভরযোগ্য তথ্য খুঁজে পাননা। অনেকে তো ভুল জ্ঞান নিয়ে পুরো প্রেগ্নেন্সিতেই শারীরিক সম্পর্ক থেকে বিরত থাকেন, যা একটি সুস্থ দাম্পত্যের জন্য বড় রকমের হুমকি।

সঠিক জ্ঞান থাকলে সহজেই গর্ভাবস্থায়ও আনন্দময় শারীরিক সম্পর্ক ধরে রাখা যায়, যা একটি দম্পতিকে নানান ভাবে সাহায্য করে। আজকের লিখায় এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা থাকছে।

গর্ভাবস্থায় শারীরিক সম্পর্কে অনীহার কারণ

গর্ভাবস্থায় শারীরিক সম্পর্কে অনেক দম্পতিরই কিছুটা অনীহা থাকে। যদিও এক্ষেত্রে নারীদের অনীহা বেশি, তবে কিছু ক্ষেত্রে পুরুষরাও অনীহা প্রকাশ করেন। এর কারণ হিসেবে বলা যায়-

  1. ভীতি কাজ করা। গর্ভের সন্তানের ক্ষতির আশংকাজনিত ভুল ভীতির কারণে অনেকেই অনাগ্রহী থাকেন।
  2. নারীর শারীরিক পরিবর্তনের সাথে ব্যাল্যান্স করে কিভাবে এটি করা যায়, এটি নিয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকে না বলেও অনেক দম্পতি এটি স্থগিত রাখেন।
  3. গর্ভবতীর শারীরিক অসুবিধা, ক্লান্তি ও দুর্বলতাও একটি উল্লেখ যোগ্য কারণ।
  4. গর্ভবতীর হরমোনাল পরিবর্তনের ফলে যৌন আকাঙ্ক্ষা ( সেক্স ড্রাইভ) কমে যাওয়া।
  5. পারস্পরিক বোঝাপড়ার অভাব।

গর্ভাবস্থায় শারীরিক সম্পর্কে বিরতির ভবিষ্যৎ প্রভাব

একটি সুখী দাম্পত্যের জন্য নিয়মিত যৌনসম্পর্ক একটি পূর্বশর্ত। কিন্তু গর্ভাবস্থার লম্বা সময়ে শারীরিক সম্পর্ক থেকে একদমই বিরতিতে গেলে দাম্পত্যে এটার প্রভাব আসতে বাধ্য। যেমন-

  1. স্বামী স্ত্রীর মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়।
  2. নিজেদের মানসিক বোঝাপড়ায় বাঁধা সৃষ্টি হয় যা তাদের প্যারেন্টিং এ নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
  3. সন্তান জন্মদানের পরে শারীরিক সম্পর্কে ফিরে আসতে সময় লাগে।
  4. প্রচুর কেস স্টাডিতে দেখা গেছে, এসময়ের দূরত্বের ফলে পুরুষরা পরকীয়াসহ অন্যান্য মন্দ অভ্যাসে জড়িয়ে পরেন, যা ধর্মীয় ও পারিবারিকভাবে ক্ষতিকর।

এসব নেতিবাচক প্রভাব থেকে দূরে থাকতে চাইলে গর্ভাবস্থায় শারীরিক সম্পর্ক করার বিষয়ে সঠিক তথ্য জানতে হবে।

গর্ভাবস্থায় শারীরিক সম্পর্ক করা যাবে কি?

উত্তরটি হচ্ছে, সুনির্দিষ্ট মেডিক্যাল সমস্যা ছাড়া সমগ্র প্রেগ্নেন্সিতেই শারীরিক সম্পর্ক করা যাবে। সাধারণত আমাদের দেশে প্রচলিত নিয়ম হচ্ছে, গর্ভাবস্থার প্রথম ও শেষ ট্রাইমেস্টারে শারীরিক সম্পর্ককে অনিরাপদ ভাবা হয়। এটি আসলে ভুল ধারণা।

একটু খেয়াল করলে আমরা দেখতে পাই, একজন নারী যখন জানতে পারছেন যে তিনি মা হতে যাচ্ছেন, ততদিনে তার গর্ভাবস্থার  ১-১.৫ মাসের মতন সময় পার হয়ে গিয়েছে। এর মধ্যেই তিনি সুস্থভাবে শারীরিক সম্পর্ক করেছেন। কিন্তু, মাতৃত্বের খবর পাবার পর থেকেই শারীরিক সম্পর্ক থেকে দূরে সরে যান। কারণ প্রায় সবার মনেই বদ্ধমূল ধারণা আছে যে, গর্ভাবস্থায় শারীরিক সম্পর্কের ফলে ভ্রূণের ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে, আদতে যেটি ভুল।

আবার আমাদের দেশের বেশিরভাগ ডাক্তারই পরামর্শ দেন প্রেগন্যান্সির প্রথম ও শেষ ট্রাইমেস্টারে শারীরিক সম্পর্ক থেকে বিরত থাকার জন্য। এটার কারণ হচ্ছে, রোগীকে বিশদভাবে বুঝিয়ে বলার মতো সময় ডাক্তারের থাকেনা, রোগীরাও এসব আলাপ শুনতে চাননা।  যেখানে আমাদের দেশের শিক্ষিত মানুষেরই সেক্স এডুকেশন অনেক ভুলে ভরা, সেখানে প্রেগন্যান্ন্সির মতো নাজুক সময়ে সেক্সুয়াল এক্টিভিটি নিয়ে ডাক্তাররা রিস্ক নিতে চাননা।

মূল কথা হচ্ছে, শারীরিক ও মানসিকভাবে কেউ আগ্রহী হলে, সে অবশ্যই শারীরিক সম্পর্ক চালিয়ে যেতে পারবে। অন্যান্য স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে গর্ভাবস্থায় শারীরিক সম্পর্ক কম সংখ্যক বার হতে পারে, কিন্তু এটি যেন পুরোপুরি বন্ধ না থাকে, এ বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। এ বিষয়ে করা গবেষণাগুলো গর্ভাবস্থায় শারীরিক সম্পর্ক চালিয়ে যাওয়াকে শুধু সমর্থনই নয়, উৎসাহিতও করে।

গর্ভাবস্থায় শারীরিক সম্পর্কের উপকারিতা-

বিভিন্ন গবেষণা হতে প্রাপ্ত তথ্য মতে, গর্ভাবস্থায় শারীরিক সম্পর্ক নিয়মিত থাকলে নানান রকম উপকারিতা পাওয়া যায়। যেমন-

১। স্বামী স্ত্রীর দাম্পত্য সম্পর্ক সুন্দর থাকে যা হবু মা- বাবার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

২। প্রেগ্নেন্সির ৩৭ সপ্তাহে বাচ্চা যখন সম্পূর্ণ ম্যাচিউরড, শরীর যখন লেবারের জন্য প্রস্তুত হতে থাকে, তখন ইন্টারকোর্সকে অনেক দেশের ডাক্তাররাই উৎসাহিত করেন। ধারণা করা হয়, এতে লেবার শুরু হবার এবং নরমাল ডেলিভারির চান্স বাড়ে।

৩। প্রেগ্নেন্সিতে হবু মায়ের যেসব মুড সুইং হয়, সেসবের কারণে অনেক দম্পতির পারস্পরিক সম্পর্কে টানাপড়েন সৃষ্টি হয়। ইন্টারকোর্স এই সমস্যার সুন্দর একটি সমাধান।

৪। একটি সফল শারীরিক সম্পর্কের ফলে হবু মায়ের শরীরে যেসব হরমোন নিঃসৃত হয়, সেটি মা ও বাচ্চা দুজনের জন্যই খুব উপকারী বলে বিবেচিত।

৫। শারীরিক সম্পর্কের সময় যে এক্টিভিটিগুলো করা হয়, এটি হবু মায়ের জন্য ব্য্যায়ামের কাজ করে, যা গর্ভবতী মায়ের লেবার ও সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উপর ইতিবাচক প্রভাব রাখে।

গর্ভাবস্থায় শারীরিক সম্পর্ক কখন ঝুঁকিপূর্ণ / নিষেধ-

সাধারণভাবে চিকিৎসাবিদ্যায় বলা হয়, স্বাভাবিক প্রেগ্নেন্সিতে নিয়মিত শারীরিক সম্পর্ক অনুমোদিত। তবে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে শারীরিক সম্পর্ক করাকে নিরুৎসাহিত বা নিষেধ করা হয়। যেমন-

১। প্লাসেন্ট্রা যদি জরায়ু মুখের কাছে থাকে। ( এটা আল্ট্রাসনোগ্রাফি থেকে জানা যাবে)

২। কোন কারণ ছাড়াই আগের স্পন্টেনিয়াস এবরশন বা মিসক্যারেজের ঘটনা থাকলে।

৩। ৫/৬/৭/৮ মাসে বাচ্চা হয়ে যাবার হিস্ট্রি থাকলে।

৪। গর্ভাবস্থায় পিরিয়ডের মতো রক্তপাত হলে, যেটাকে থ্রেটেন্ড প্রেগন্যান্সি বলে, সেরকম কিছু হলে।

৫। গর্ভকাল পূর্ণ হবার আগেই পানি ভাঙলে।

এসব কারণ ছাড়াও অন্য যেকোনো অস্বাভাবিক কিছু অনুভব করলে ইন্টারকোর্স থেকে বিরত থাকতে হবে। এক্ষেত্রে ডাক্তারের সাথে কথা বলে নিজের গর্ভাবস্থা সম্পর্কে জেনে নিতে হবে এবং নিজেও প্রি-নাটাল কেয়ার সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে।

গর্ভাবস্থায় শারীরিক সম্পর্কের ঝুঁকি এড়াতে যেসব সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে-

প্রেগন্যান্সিতে একজন নারী শারীরিক ও মানসিক নানান পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যান। এসব পরিবর্তনের ফলে হবু মায়ের সব কাজেই সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। যদিও স্বাভাবিক প্রেগ্নেন্সিতে শারীরিক সম্পর্ক অনুমোদিত ( permitted), তবুও এসময় বেশ সাবধান থাকতে হয়। অন্যথায়, স্বাভাবিক প্রেগ্নেন্সিতেও ঝুঁকি দেখা দিতে পারে।

গর্ভাবস্থায় শারীরিক সম্পর্কে যেসব জিনিস খেয়াল রাখতে হবে তা হলো-

১। প্রথমত, দুজনের মানসিক ও শারীরিক আরামের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। এসময় জোর-জবরদস্তি করা মায়ের শারীরিক ও মানসিক অবস্থাকে আঘাত করতে পারে। এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে হবু বাবাকে। হবু মায়ের সাথে আনন্দময় সময় কাটানো, তাকে সময় নিয়ে উত্তেজিত করা এবং হবু মায়ের স্বাচ্ছন্দ্যের দিকে খেয়াল রেখে শারীরিক সম্পর্ক করতে হবে।

২।  সেক্স পজিশনের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। অন্যান্য সময়ে যেভাবে যৌন সম্পর্ক করা যেতো, গর্ভাবস্থায় সেভাবে সম্ভব নাও হতে পারে, বা হবু মায়ের জন্য অসুবিধার মনে হতে পারে। তাই, দুজনে মিলে নিজেদের সুবিধামতন পজিশনিং করে নিতে হবে, এবং এটা গর্ভাবস্থার বিভিন্ন ধাপের সাথে মানানসই হতে হবে। অসংখ্য দম্পতির মাঝে সেক্স পজিশন হিসেবে মিশনারি পজিশনই প্রচলিত, কিন্তু আল্লাহ্‌তায়ালা অন্যান্য সেক্স পজিশনের  বিষয়টি বৈধ দম্পতির জন্য উন্মুক্ত রেখেছেন। আল্লাহর দেয়া হালাল নিয়ামতকে কাজে লাগিয়ে গর্ভাবস্থায় শারীরিক সম্পর্ক উপভোগ করা উচিত।

৩। শারীরিক সম্পর্কের আগে অবশ্যই দুজনকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে নিতে হবে, নতুবা ইনফেকশনের চান্স তৈরি হয়। বিশেষ করে, দম্পতির কারোর যদি আগে থেকেই সেক্সুয়ালি ইনফেকশনাল ডিজিজের হিস্ট্রি থাকে, তাহলে খুবই সাবধান থাকতে হবে। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

৪। এসময় যেহেতু গর্ভবতী মা বেশ নাজুক অবস্থায় থাকেন, তাই কোনোরকম ফ্যান্টাসি বেইসড বা এগ্রেসিভ সেক্সুয়াল এক্টিভিটি করা যাবেনা। এতে স্বাভাবিক প্রেগন্যান্সিতেও ঝুঁকির সম্ভাবনা তৈরি হয়। 

উপরের পরামর্শগুলো পড়ে কারোর যদি মনে হয় যে ,গর্ভাবস্থায় শারীরিক সম্পর্ক খুবই অসুবিধাজনক ও পরিপূর্ণ আনন্দময় নয়, তবে এটি খুব ভুল হবে। সঠিক তথ্য হচ্ছে, সারা পৃথিবীর অসংখ্য দম্পতি এসময়ের পরিবর্তিত সেক্সুয়াল এক্টিভিটিকে উপভোগ করেন, এটিকে তাদের দাম্পত্যের একটি ভ্যারাইটি হিসেবে গ্রহন করেন। তাই ভয় না পেয়ে গর্ভাবস্থার পরিবর্তনের সাথে মিলিয়ে নিজেদের দাম্পত্যকে উপভোগ করাটাই উচিত।

গর্ভাবস্থায় শারীরিক সম্পর্ক সহজ করতে কিছু পরামর্শ-

১। মেন্টাল ইন্টেমেসি বা পারস্পরিক বোঝাপড়া

যেহেতু এই সময়টি একটি দম্পতির জন্য বেশ আলাদা একটি সময়, তাই দুজনকেই দুজনের চাহিদা ও সুবিধা- অসুবিধাগুলো বুঝতে হবে। দেখা যায়, এসময় নারীরা বেশি পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যান, এবং নারীরাই বেশি যত্ন পান, তার কথাকেই গুরুত্ব দেয়া হয়। কিন্তু হবু মাকেও তার স্বামীর শারীরিক চাহিদা সম্পর্কে যত্নশীল হতে হবে। একজন সুস্থ পুরুষের পক্ষে এতো লম্বা সময় ধরে শারীরিক সম্পর্ক থেকে দূরে থাকা কঠিনই বটে। কখনো কখনো পুরুষরা বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কেও জড়িয়ে পড়েন। তাই, স্বামীর যেমন উচিত স্ত্রীর শারীরিক অবস্থাকে গুরুত্ব দেয়া, তেমনি স্ত্রীরও উচিত স্বামীর চাহিদার প্রতি খেয়াল রাখা।

আবার, আমাদের দেশের আর্থ – সামাজিক ও পারিবারিক প্রেক্ষাপটে একটি দম্পতি তাদের সুবিধামতন সময়ে শারীরিক সম্পর্ক করতে পারেন না। নিজেদের প্রাইভেট স্পেস ও গোসলের ব্যাপার আছে এখানে। তাই এই বিষয়টিও দুজনে মিলেমিশে সামলাতে হবে।

তাই ফিজিক্যাল ইন্টিমেসির আগে নিজেদের মানসিক ইন্টিমেসিটা সুন্দর হতে হবে।

২। গর্ভাবস্থায় একজন নারী প্রচুর পরিমাণ শারীরিক অসুবিধার সম্মুখিন হন। একটি সুস্থ-স্বাভাবিক প্রেগন্যান্সিতেও একজন হবু মা খুব দুর্বল অনুভব করতে পারেন। প্রচুর বমি হওয়া, মুড সুইং, শারীরিক পরিবর্তনের অস্বস্তি, হাড় ও মাংস পেশীর ব্যথা, সাংসারিক দায়িত্ব পালন- সব মিলিয়ে অনেক গর্ভবতী শারীরিক সম্পর্কে অনাগ্রহী থাকেন।

এসময় গর্ভবতীর জন্য পুষ্টিকর খাবার, প্রয়োজনীয় বিশ্রাম ও সাংসারিক কাজ থেকে কিছুটা ছাড় দিতে হবে। বলাই বাহুল্য, এই ক্ষেত্রে হবু বাবার ভুমিকাই অগ্রগন্য। তাছাড়া, হবু মায়ের নিজেকেও মানসিকভাবে ইতিবাচক থাকতে হবে।

৩। গর্ভাবস্থায় শারীরিক সম্পর্ক ব্যাপারে পড়াশোনা করা বেশ কার্যকরী হতে পারে। বিভিন্ন গবেষণাপ্রাপ্ত পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, বেশিরভাগ দম্পতি এসব ব্যাপারে কম জানেন অথবা ভুল জানেন এবং জানার চেষ্টাও করেন না। এই তালিকায় কিন্তু উচ্চ শিক্ষিত মানুষও আছেন। বিপরীতে, যারা এব্যাপারে জানেন তারা বেশ ভালভাবেই এই পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছেন।  তাই, হবু মা –বাবা দুজনের জন্যই প্রি নাটাল কেয়ার সম্পর্কে জানা থাকা দরকার। সুযোগ থাকে এ বিষয়ে প্রি নাটাল কোর্স করে নেয়া যেতে পারে।

৪। শারীরিক সম্পর্কের সময় ও পজিশনের ব্যাপারে পুরাতন ধ্যান ধারণা থেকে বের হতে হবে। নিজেদের আরাম ও চাহিদার দিকে খেয়াল রেখে শারীরিক সম্পর্ক করতে হবে।

৫। কখনো যদি মনে হয়, ভ্যাজাইনাল ড্রাইনেস দেখা দিয়েছে, তবে নির্ভরযোগ্য ব্র্যান্ড এর লুব্রিকেন্ট ব্যাবহার করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে ওয়াটার বেইজড লুব্রিকেন্ট ব্যবহার নিরাপদ। 

মোট কথা, কম ঝুঁকিসম্পন্ন স্বাভাবিক প্রেগন্যান্সিতে শারীরিক সম্পর্ক যদিও অনুমোদিত, তবে অন্যান্য সময়ের চেয়ে বেশ আলাদা। তাই সেভাবেই নিজেদেরকে মানসিক ভাবে প্রস্তুত করে এটি উপভোগ করতে হবে।

গর্ভাবস্থায় শারীরিক সম্পর্ক নিয়ে করা কিছু বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছি এখানে-

১। এসময় শারীরিক সম্পর্ক করা যাবে কি?

-স্বাভাবিক গর্ভাবস্থায় সতর্কতা মেনে করা যাবে, ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভাবস্থায় বিরত থাকতে হবে ও ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

২। শারীরিক মিলনের সময় বাচ্চার ক্ষতি হবার চান্স আছে?

-না। বাচ্চা জরায়ুর দেয়ালের ভেতরে প্লাসেন্ট্রার মাঝে এম্নিওটিক ফ্লুইডে সুরক্ষিত অবস্থায় থাকে। স্বাভাবিকভাবে সেখানে সেক্সুয়াল এক্টিভিটির প্রভাব পৌঁছায় না।

৩। শারীরিক সম্পর্কের সময় বাচ্চা কি কিছু টের পায় বা পেতে পারে?

বাচ্চা এসময় মায়ের মানসিক অবস্থা টের পায়, মায়ের আনন্দ বা কষ্টের অনুভূতি টের পায় কিন্তু শারীরিক সম্পর্কজনিত কিছু টের পাওয়ার ক্ষমতা বাচ্চার থাকেনা।

৪। গর্ভাবস্থায় শারীরিক সম্পর্কের ফলে মিসক্যারেজ হতে পারে?

সুস্থ প্রেগ্নেন্সিতে সাবধানতা অবলম্বন করে শারীরিক সম্পর্ক করলে মিসক্যারেজের কোন সম্ভাবনাই থাকেনা।

৫। এসময় শারীরিক সম্পর্কে প্রটেকশন ব্যাবহার করতে হবে?

-না। সাধারণত এসময় কোন প্রটেকশন ব্যাবহার করতে হয়না। তবে বিশেষ কোন কারণে, যেমন ইনফেকশনাল ডিজিজের ক্ষেত্রে বা ডাক্তারের পরামর্শ মতে প্রটেকশন ব্যাবহারের প্রয়োজন পরতে পারে।

৬। গর্ভাবস্থায় নিয়মিত শারীরিক সম্পর্ক চালিয়ে যেতে হবে?

এটি নির্ভর করে হবু মায়ের আগ্রহ, সুস্থতা ও দম্পতির নিজস্ব বোঝাপড়ার উপর। স্বাভাবিক গর্ভাবস্থায় শারীরিক সম্পর্ক করতেই হবে কিংবা একদমই করা যাবেনা- দুটোই ভুল ধারণা। চাইলে করা যাবে, না চাইলে করতে হবেনা।

৭। এসময় অর্গাজম হয়?

-জি। এসময় নারী ও পুরুষ- দুজনেরই স্বাভাবিক ও পূর্ণ অর্গাজম হয়। 

একটি দাম্পত্য সম্পর্কের মূল উপাদান বলা যায় শারীরিক সম্পর্ককে। এই সম্পর্কের মাধ্যমেই সন্তান আসার প্রক্রিয়া শুরু হয়। তাই গর্ভাবস্থায় শারীরিক সম্পর্ক নিয়ে ভুল থেকে বের হয়ে দাম্পত্যকে উপভোগ করতে হবে, প্রয়োজনীয় সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।

সম্পাদকের নোট: এই বিষয়ে মাতৃত্ব আয়োজিত এই ওয়েবিনারটি দেখতে পারেন, যেখানে একজন মিডওয়াইফ এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেছেন।

তথ্যসূত্র

লেখাটি রিভিউ করেছেন –

ডাঃ সাবেরিনা সালাম সারাহ
MBBS, PGT (Pediatrics), Medical Officer, Pediatrics & Neonatology Department, Bangladesh Specialized Hospitalå