প্রাকৃতিক ভাবে একজন মা অনেক ক্ষমতাশীল। মা যদি মাতৃত্ব কে উপভোগ করতে পারেন তাহলে সব কিছুই প্লাস পয়েন্ট মনে হবে। শিশুকে কোলে নেয়া, শিশুর কান্নার সাথে সাথেই মৌখিক সহায়তা, পারলে শারীরিক সহায়তা দেয়া, শিশুকে বার বার দুধ খাওয়ানো, শিশুর সাথে একই বিছানায় ঘুমানো, শিশুর ন্যাপি পরিবর্তন করা, পারলে পরিস্কার করা (elimination communication confidence) …. এরকম সবকিছুই এটাচমেন্ট প্যারেন্টিং এর মধ্যে পড়ে, যার মাধ্যমে আপনি শিশুর মধ্যে নিরাপত্তা, ভালোবাসার বীজ বুনে দিতে পারেন ।
এর মধ্যে সবচেয়ে বড়ো নিয়ামত হল দুধ পান করানো। মা যখন শিশুকে দুধ পান করান তখন উভয়ই উপকৃত হন। বুকের দুধ নিরাপদ, পুষ্টিকর, ঝামেলাহীন – এটা আমরা সবাই জানি। একই সাথে বুকের দুধ মা ও শিশুর মধ্যে নিবিড় বন্ধন তৈরি করে, কেননা শিশুকে যখন মা তার বাহুডোরে আবদ্ধ করে দুধ পান করান তখন একদিকে শিশুর ব্রেইন যেমন উষ্ণ আলিঙ্গনের প্রভাবে অক্সিটোসিন নি:সরণ করে তেমনি শিশুর দুধ চোষার কারনে মায়ের পিটুইটারি গ্ল্যান্ড অক্সিটোসিন উৎপন্ন করে যা আবার ব্রেস্ট টিস্যু কে ট্রিগার করে ও দুধ উত্পাদন করে ।
কীভাবে কাজ করে?
- শিশুর দুধ চোষা
- স্পাইনাল কর্ড এ অবস্হিত thoracic সেনসরি তে সিগন্যাল
- হাইপোথ্যালামাস এ সিগন্যাল
- পিট্যুইটারি তে সিগন্যাল
- অক্সিটোসিন নি:সরণ ও সংশ্লেষণ সেই সঙ্গে প্রোল্যাকটিন হরমোন নিঃসরণ হয়
- Alveoli তে থাকা মায়োইপিথিলিয়াল নালী ও কোষ কে সংকুচিত করে
- দুধ নেমে আসে (milk ejection or let down reflex)….
এভাবে চক্রাকারে এভাবে দুধ নিঃসরন হয়।
অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে এই রিফ্লেক্স শিশুর কান্নার আওয়াজ শুনে অথবা শিশুকে দেখলেও হতে পারে, সুবহানাল্লাহ ! শিশু দুধ চোষা শুরু করার সময় একটি বিচিত্র অনুভূতি হয় (drought), যাতে মায়েরা বুঝতে পারেন দুধ নেমে আসছে।
দুধ উৎপাদন চক্র ব্যাহত হবার কারণগুলো
- মা যদি মানসিক চাপে থাকেন
- ঘুম ও বিশ্রাম কম হয়
- ব্রেস্ট এ ব্যথা থাকে
- কোন কারণে অনিশ্চয়তা বোধ করেন
এসব কারণে Ejection Reflex কাজ করে না, ফলে স্তন দুধ জমে ফুলে যায়, যেটা ব্রেস্ট এনগর্জমেন্ট (Breast Engorgement) নামে পরিচিত। ব্রেস্ট এনগর্জমেন্ট একজন মায়ের জন্য বেশ কষ্টদায়ক।
তাছাড়া মা যদি ঘন ঘন দুধ পান না করান তখন অতিরিক্ত দুধ জমে থাকার কারণে উত্পাদন কমে যায়। সমাজবিজ্ঞান এর চাহিদা-যোগান তত্ত্ব অনুযায়ী চাহিদা যত বেশি হবে যোগান তত বেশি হবে। যে কারণে প্রতি ১.৫-২ ঘণ্টা পর পর দুগ্ধাদানের করানোর চেষ্টা করতে হবে, এমনকি রাতের বেলাতেও।
ডেলিভারির আগ পর্যন্ত প্রোজেস্টেরন ও ইস্ট্রোজেন হরমোন এর আধিক্য থাকে। প্রসব হয়ে যাওয়ার পর এ হরমোনগুলো কমে যায় এবং প্রোল্যাকটিন ও গ্লুকোকর্টিকয়েড (Glucocorticoid) হরমোন বেড়ে যায়, যা বুকের দুধ উৎপাদনে সহায়ক।
কোলোস্ট্রাম বা শাল দুধ
কোলোস্ট্রাম গর্ভাবস্থায় তৈরী হয় এবং এটা বেশ ঘন হয়, এতে থাকে প্রচুর ফ্যাট ও এন্টিবডি। প্রথম দু’ দিন শুধু এই কোলোস্ট্রাম নিঃসরণ হয়। এই দুধকে গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড ধরা হয়। এই দুধ অল্প খেলেও উপকার ও অল্পতেই পেট ভরে যায় আলহামদুলিল্লাহ। তবে এটা বের করে আনতে মা ও শিশু দুজনের প্রচেস্টা প্রয়োজন। মা লক্ষ রাখবেন যেন শিশুর ল্যাচিং বা ব্রেস্ট এ সাক (Suck) করার পজিশন ঠিক থাকে আর তিনি নিজেও যেন মানসিক চাপমুক্ত থাকেন।
দুগ্ধদানের অজানা উপকারিতা
বুকের দুধ পান করানোর উপকারিতা বলে শেষ করা যাবেনা। আমরা সবাই সেগুলো জানিও বৈকি । তবে যেটা অনেকেই জানেন না এমন একটা তথ্য হলোঃ ব্রেস্টফীডিং শিশুর ও মা উভয়ের ঘুমের জন্য সহায়ক। শিশু যখন বুকের দুধ পান করে তখন তার পাকস্থলী তে দুধের ফ্যাটি উপাদান এর আধিক্য তৈরি হয়, ফলে শিশুর ব্রেইন প্রচুর পরিমাণে Cholecystokinin উৎপন্ন করে। এই হরমোন এর মাত্রা দুধ পান করার শেষে একবার এর সর্বাধিক চূড়ায় উঠে এবং দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্যায়ে যায় ৩০-৬০ মিনিট পরে যার ফলে শিশু গভীর ঘুম দিয়ে থাকে। প্রথম দশ মিনিট পান করানোর পরে শিশুর ঘুম ঘুম ভাব আসে । ফলে শিশুর ঝিমুনি ভাব আসে। আমরা মনে করি শিশু না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। এরপর সে এই তন্দ্রাচ্ছন্ন ভাব থেকে জেগে উঠে আবার পান করতে চায় (আমরা হয়তো বিরক্ত হই)।পরের ৩০-৬০ মিনিটে যখন শিশু পুনরায় পান করে তখন অধিক পরিমাণে নিউট্রিয়েন্ট ও ফ্যাট পাকস্থলী তে প্রবেশ করার ফলে শিশুর ব্রেইন cholecystokinin হরমোন রিলিজ করে এবং শিশু গভীর ঘুমে মগ্ন হয় ।
তাছাড়া মা এর শরীরেও এই একই হরমোন নিঃসরণ হয়। ফলে মা নিজেও ঘুম ঘুম ভাব বোধ করেন, শরীর ও মনে প্রশান্ত (Relax) বোধ করেন। এটা মায়ের ক্লান্তি দূর করতে সহায়তা করে ।
শিশুকে দুধ পান করানোর মাধ্যমে ঘুম পাড়ানোকে অনেকে নেতিবাচক মনে করেন। এতে শিশুর অভ্যাস খারাপ হয়ে যায় বলে মনে করেন। তবে আপনি যদি মনে করেন শিশুকে তার জীবনের প্রথম ছয় মাসে কঠিন ট্রেনিং দিয়ে ফেলবেন, তাহলে আবার ভাবুন। শিশুর জন্য এটা আপনার সাহচর্য লাভ করার সময় এবং যা পরবর্তীতে তার মানসিক আচরনকে গভীরভাবে প্রভাবিত করবে ইনশাআল্লাহ।
ঠিক একই কারণে শিশু ও মা একই বিছানায় ঘুমানোটা শিশুকে আহলাদ দেয়া নয়। শিশু কাঁদলে দেরি করে কোলে না নিয়ে দ্রুত রেসপন্স করা (যেমন মুখে আদরের শব্দ করা, কাছে গিয়ে কোলে নেয়া, আশ্বস্ত করা) তার অভ্যাস খারাপ করা নয় , বরং তা এটাচমেণ্ট প্যারেন্টিং (Attachment parenting) এর আওতায় পড়বে ।
আরও একটি মজার তথ্য না দিলেই নয়, তা হল your breast is the best pacifier of all. Even if you feel there is no milk is ejecting by suckling .