শিশুদের করা ভুল, ত্রুটি বা দোষগুলোকে বিচার করার সময়ে আমরা তাদেরকে বড়দের বিবেচনায় রাখি। আমরা মনে করি বড়দের করা দোষ, ত্রুটিগুলো যেমন অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে করা, হয়তো শিশুদের দোষগুলোও তাদেরই কোন অসৎ উদ্দেশ্যের কারণেই করা। শাসন করতে গিয়ে শিশুদের ক্ষেত্রে এমন ধারণা রাখা তাদের ফিতরাতে উপর জুলুম হয়ে যায় বলে এমন ধারণা সম্পূর্ণ অসত্য।

আমরা জানি, শিশুরা ইসলামী ফিতরাতের উপর জন্মগ্রহণ করে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহিহ বুখারির ১৩৫৮ নং হাদীসে আমাদেরকে এমনটাই বলেছেন। হাদীসটির বাকী অংশে তিনি বলেন, বাবা মা-ই শিশুদেরকে ইহুদি বানায়, খ্রিষ্টান বানায়, অগ্নিপূজক বানায়। এককথায়, শিশুদের মানসিকতা বিগড়ে যাওয়ার জন্য পরিবার ও পরিবেশ অনেকাংশেই দায়ী। জন্ম থেকে শিশুদের ফিতরাত বজায় রাখার ও তা বিকশিত করার ঐকান্তিক প্রচেষ্টাই মূলত একজন সচেতন পিতৃত্ব বা মাতৃত্বের দাবী। শিশুদেরকে তাদের অভ্যন্তরের শুদ্ধতার সাথে পরিচিত করানোটাই এখানে তারবিয়াতের মূল লক্ষ্য।

শিশুদের মাঝে যেসব বিচ্যুতি দেখা যায়, সেগুলো মোটা দাগে আচরণিক সমস্যা। তাদের মাঝে সত্য-মিথ্যা, সঠিক-ভুল এতোটা সচেতনভাবে থাকেনা বলে কোনটা ন্যায় আর কোনটা অন্যায় সে সম্পর্কে তারা অজ্ঞ থাকে। একারণে, কখনো কখনো সঠিক জায়গায় সঠিক আচরণটি তারা করতে পারেনা। আর, আচরণের এই প্রথম পাঠটুকু তারা নেয় পরিবার ও পরিবেশ থেকে। সেজন্য, পরিবার-পরিবেশ ও শিশুর মাঝে এমন একটা বোঝাপড়া ও যোগাযোগ থাকা উচিৎ যাতে শিশুরা পরিবেশ থেকে কী শিখছে তা পরিবেশকে জানাতে পারে আবার পরিবেশ শিশুটাকে কী দিচ্ছে সে সম্পর্কে পরিবেশ সচেতন থাকতে পারে।

শিশুদের নিজস্ব কল্পজগত ও বুঝের আপন মানদন্ড থাকে। তাদের এই কল্পনাজগত, বুঝ ফিতরাত ও বিকাশের প্রয়োজনে আপনা থেকেই গঠিত হয়ে যায়। কিন্তু তাতে নানারকম আগাছা জন্মানোর সম্ভাবনা থেকেই যায়। যেসব আগাছা পরবর্তী বয়সে তাদের ফিতরাতকে ধ্বংস করে দিতে পারে। সেজন্য আগে থেকেই তাদের বুঝ ও কল্পনাজগতের আগাছাগুলো পরিষ্কার করার পদক্ষেপ নিতে হবে। আগাছা পরিষ্কারের প্রসঙ্গ আসলে আগে আগাছাকে শনাক্ত করতে হবে। শিশুদের কল্পনাজগতের আগাছাগুলো জানতে হলে তাদের কল্পনাজগতে প্রবেশ করতে হবে। ভালো হয়, যদি আগে থেকেই শিশুর জানার সোর্সকে সীমিত করা ও গল্প বলা ও পড়ে শুনানোর মাধ্যমে জগতটাকে নিজেরাই গড়ে দেয়া। তাদের সার্বক্ষণিক চিন্তাগুলোকে গুরুত্বের সাথে পর্যবেক্ষণ করা তাদের কথাগুলোকে মনোযোগ সহকারে শুনা।

যখন শিশুরা পরিবারকে তাদের প্রতি আগ্রহী হতে দেখবে তখন তারা নিজেরাই নিজেদের চিন্তাগুলোকে মেলে ধরবে। তাদেরকে কথা বলায় স্বাধীনতা দিলে তাদের আচরণের ব্যাখ্যাও তারা করতে পারবে ও বুঝতে পারবে। যখন তারা সচেতনভাবে আচরণগুলোকে ব্যাখ্যা করতে সক্ষম হবে তখন তারাই আচরণে সচেতন হওয়া শুরু করবে। যদি কোথাও কোন আপত্তিকর আচরণ দেখেও ফেলে তাহলে সেটা সম্পর্কে পরিবারের সাথে আলোচনা করে নিতে চাইবে।

উল্লেখ্য যে, শিশুদের সাথে এই যোগাযোগটা গড়তে চেষ্টা করতে হবে তাদের ৩ বছর হওয়ার আগে এবং এটা করা যাবে ৭ বছরের আগ অবধি। ৭ বছরের পর থেকে তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করাটা কিছুটা কষ্টসাধ্য হয়ে উঠবে।

লেখাটি কি আপনার উপকারে এসেছে?
হ্যানা