বিশ্ব দৌলা সপ্তাহ ২০২৪ এর শেষ দিনে চলে এসেছি। আজ মনে করতে চাই গাযার সেসব মা’দের যারা বর্তমানে এই ২০২৪ এ এসেও ১০০ বছর আগের পরিস্থিতিতে দিনাতিপাত করছে! কি সাংঘাতিক কষ্টকর এই বিষয়টা একজন দৌলা হিসেবে গভীর ভাবে অনুভব করছি। সাধারণ একটা উদাহারণই যদি বলি, হাসপাতালে যখন একজন মা লেবার পেইন নিয়ে ভর্তি হয় তখন বেশিরভাগ হাসপাতালেই দেখা যায় মায়ের সাথে স্টাফরা কঠোর বা রূড় আচরণ করে ফেলে কারণে অকারণে। একজন দৌলা হিসেবে এটা মানতে কষ্ট হয় কারণ এই আচরণ একটা মা’কে তার লেবারে সাহায্য তো করেইনা বড়ং তাদের জন্য মানসিক চাপ সৃষ্টি করে। এটা স্বাভাবিক প্রসবের জন্য সুন্দরভাবে অগ্রসর হতে অনেক বড় বাঁধা হয়ে দাড়াতে পারে। দৌলা হিসেবে তখন চেষ্টা করি মা’কে ইতিবাচক কথা বলে, আশা ভরসা দিয়ে সঠিকভাবে তাদের লেবারে মনোযোগ দিতে।

কিন্তু যখন গাযার কথা ভাবি, আমার একটা সূক্ষ কষ্ট অনুভূত হয়। ওখানে গর্ভবতী ও প্রসুতি মায়েরা বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছে খাদ্য, পানি, চিকিৎসার দুর্ভিক্ষ এর মধ্যে।

ইসলামিক রিলিফ প্রতিষ্ঠান এর সাহায্য কর্মী ফাতিমা বলেন, “বর্তমানে গর্ভধারণ ১০০ বছর আগের পরিস্থিতির মতো। মহিলারা চিকিৎসা সেবা, চেকআপ, স্ক্যান বা ভাল পুষ্টি ছাড়াই গর্ভকালীন সময় পার করছে। আমার পরিচিত অনেক মহিলার চিকিৎসা সেবার অভাবে গর্ভপাত হয়েছে এবং অন্যান্য সমস্যা হয়েছে।”

মায়েরা স্বাভাবিক প্রসব করার মতো প্রস্তুতি নিতে পারছেন না, যার ফলে সিজার হচ্ছে একমাত্র বিকল্প। সবচেয়ে দুঃখের বিষর সিজার হচ্ছে এন্সথেসিয়া বা কোন ধরনের ব্যাথানাশক ছাড়াই! ভেবে দেখুন, আপনার শরীর কাটা হচ্ছে, আপনি প্রতিটা কাটা অনুভব করছেন! চিন্তা করা যায়না মায়েরা কতটা বর্বরতার মাঝে দিনাতিপাত করছে! আইয়ামে জাহিলিয়াত ও কি এতোটা খারাপ ছিল?

প্রতিদিন গড়ে ১৮০ মা সন্তানের জন্ম দিচ্ছে এই প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যে, ওদের না আছে ন্যুনতম চিকিৎসা সেবা না আছে মাসিক স্বাস্থ্যবিধি মেনেচলার জন্য উপকরণ। নিফাস এমনকি হায়েজের সময়ে প্রয়োজনীয় ন্যাপকিনের অভাবে অস্বাস্থ্যকর কাপড় ব্যবহার করতে গিয়ে অনেকের ইনফেকশন হচ্ছে।

ইজরায়েলি গণহত্যার মাঝে সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মায়েরা অবিরতভাবে ছুটছে নিজের এবং সন্তানের জীবন রক্ষার্তে। যার ফলে সময়ের পূর্বেই বাচ্চারা দুনিয়ায় চলে আসছে। ৩ ভাগের ২ ভাগ হাসপাতাল এবং ৮০ ভাগ স্বাস্থ্যসেবায় এখন অকার্যকর। মায়েরা তাবুতে বা গাড়িতে সন্তান প্রসব করছে। এমনকি সিজার হচ্ছে তাবুতে, মায়েরা পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে পারছেনা এবং ইনফেকশন হচ্ছে।

পুরুষ মহিলা নির্বিশেষে হাজার হাজার মানুষের জন্য একটাই টয়লেট থাকার ফলে গর্ভবতী বা প্রসূতি মায়েদের লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা লাগছে। আমরা সবাই জানি একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য পানি কতটা জরুরী এবং তাকে বারবার টয়লেটে যেতে হয় এই সময়ে মূত্রাশয় খালি করার জন্য। কিন্তু দীর্ঘ লাইনে দাঁড়ানো এড়াতে মায়েরা পানি খাচ্ছেন কম। 

পানিশুণ্যতায় ভুগছেন মায়েরা। স্তন্যদানকারী মায়েরা পানি এবং পুষ্টিকর খাবারের অভাবে সঠিকভাবে দুধ উৎপাদন করতে পারছেনা। নবজাতকেরা খাবারের অভাবে মৃত্যুর কোলে ঢলে পরছে।

এইসব তথ্য দৌলা হিসেবে মেনে নেয়া খুবই কষ্টকর! মুসলিমদের প্রতি এই সহিংসতা মেনে নেয়া কঠিন। আল্লাহ সাহায্য করুক ওইসব মা এবং তাদের সাহায্যকারীদের যারা এই প্রতিকূল পরিবেশে, এই গনহত্যার মধ্যেও প্রসবের কাজ করছেন। আমি তাদের কষ্ট গভীরভাবে অনুভব করি। আল্লাহ সবাইকে উত্তম প্রতিদান দিক এবং সহজ করুক এই পরীক্ষা। অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাই! 

আমার অন্যান্য লেখা পড়ুন এখানে

তথ্যসূত্রঃ

রিলিফওয়েব

লেখাটি কি আপনার উপকারে এসেছে?
হ্যানা