
আগের পর্বে লিখেছিলাম একাধিক সন্তানের মাঝে দ্বন্ধের কথা। কিভাবে সূত্রপাত হয় এর তারও ব্যাখ্যা দেবার ট্রাই করেছি। আজ চেষ্টা করব এর সমাধান তুলে ধরার।
প্রথমেই আসি, বাচ্চাদের সাথে কি কি করা যাবেনা তার ব্যাপারে।
বড় সন্তানের সাথে প্রেগন্যান্সির সময় ও ছোট বাচ্চা জন্মানোর পর কোনোভাবেই খারাপ ব্যাবহার করা যাবেনা। মারার তো প্রশ্নই উঠেনা। আপনার মেজাজ খুব খারাপ থাকলে তা কন্ট্রোল করার চেষ্টা করুন, মেডিটেশন করুন, কাউন্সেলর এর হেল্প নিন। কিন্তু তার প্রভাব বাচ্চার উপর পড়তে পারবেনা।
বাচ্চা হবার পর বড় জনকে কিছুতেই অবহেলা করা যাবেনা। ওর রাগ জেদের পেছনের কারন বুঝতে হবে। ছোটটাকে খাওয়া আর ঘুম পাড়ানো বাদে ওর এক্সট্রা টাইম খুব একটা লাগেনা।
আত্মীয়স্বজন কেউ আসলে তারা যেন শুধু ছোট বাচ্চার জন্য গিফট না আনে। ছোটজন গিফটের কিছুই বুঝেনা। আনলে দুজনের জন্যই নয়তো বড়জনের জন্য, নয়তো কারো জন্যই নয়। সবাইকে বলে দেবেন, বড়জনের সামনে যেন এমন কোনো কথা না বলে যাতে সে কষ্ট পায়। যেমন, “ভাই তো তোমার মতো দুষ্ট না”, ” ছোটজন তো গায়ের রঙ ভালোই পেয়েছে, বড়টার মতো কালো হয়নি” এরকম যেকোন কথা কোনোভাবেই ওর সামনে বলা যাবেনা, কেউ বললে কঠিন প্রতিবাদ করবেন।
বড়জনের কোনো জিনিস বা খেলনা ছোটজনকে দিয়ে দেয়া যাবেনা তার পার্মিশন ছাড়া। ও যদি স্বেচ্ছায় দিতে রাজি হয় তবেই শুধু দেয়া যাবে।
যদি বড়জনের ছোটজনকে আঘাত বা ব্যাথা দেবার প্রবনতা থাকে তবে কিছুতেই ওকে বড়জনের সাথে একা রেখে কোথাও যাওয়া যাবেনা। একান্তই টয়লেট বা অন্য কোথাও যেতে হলে বড়টিকে কিছুক্ষন কোনো জিনিস বা ফোন বা টিভি দিয়ে বিজি রেখে তারপর যাবেন।
কখনোই এক বাচ্চার পক্ষ নিয়ে কথা বলা যাবেনা। আপনি যতই নিশ্চিত হোননা কেন একজনের দোষের ব্যাপারে, বাচ্চাদের সামনে একজনের পক্ষ নিয়ে আরেকজনকে বকা বা মার দেয়া যাবেনা।
ওদের একজনের সামনে অন্যজনের কোনো তুলনা করবেন না। যেমন, ” দেখেছ ও কত সুন্দর করে খেয়ে নিল, আর তুমি খাচ্ছো না!”, “ওকে বলতেই কথা শুনে, আর তুমি কখনোই শোনোনা,”। এছাড়াও একজনের সামনে আরেকজনকে ভালো বা স্মার্ট, বা খারাপ, দুষ্টু এগুলোর কিছুই বলা যাবেনা। আপনি যখনি একজনকে খারাপ বলবেন, অন্যজন ভাববে, আমিতো ভালো, ওর মতো খারাপ নই। আর পরবর্তীতে সে এই ধারনা তার ভাইবোনের সাথে সময় কাটানোর সময়ও প্রয়োগ করবে।
একজন চাইল বলেই বা কাঁদল বলেই তাকে অন্যবাচ্চার জিনিস দেয়া যাবেনা। আপনার প্রিয় কোনো জিনিস ধরলে আপনি যেমন তা নিয়ে নেন এটা বড়দের জিনিস বলে, ঠিক তেমনি আপনার বাচ্চারও তার পছন্দের জিনিস আছে। সেটা কেউ ধরলে তারও খারাপ লাগে, কষ্ট হয়। আর আপনি সেটাকে পাত্তা না দিয়ে শুধু অন্যজনের কান্না বা জেদ থামাতে দিয়ে দেন ওই জিনিস/খেলনা। কখনোই এই অবিচার করা যাবেনা।
সব দায়িত্ব বড় সন্তানের নয়। তাকে সব কিছু বুঝতে হবে এমন আশা করা যাবেনা। ঝগড়া লাগলেই তাকে গিয়ে মেরে বকে ঝগড়া থামানোর চেষ্টা করবেন না।
ছোটজনকে এই শিক্ষা কখনোই দেয়া যাবেনা যে সে ছোট বলে সব পাবে, জেদ বা কান্না করলেই সব তার হাতে তুলে দেয়া হবে।
আমাদের দেশের বেশীরভাগ পরিবারে দেখা যায়, ছোট সন্তানটি অসম্ভব জেদী, তাকে সবাই মাথায় তুলে রাখে, বড় ভাইবোনের প্রতি তার ব্যবহার কে “ছোটরা তো এমন করবেই” বলে উড়িয়ে দেয়া হয়। সে চাওয়ার আগেই সব পায়। তাকে ঘরের কোনো কাজ করতে দেয়া হয়না। সব ত্যাগ শুধুই বড়জনের দায়িত্ব।
এসবই হয় ভুল প্যারেন্টিং এর কারনে। যে ভুল আমাদের মা বাবা করে এসেছেন তা যেন আমরা না করি।
ছবি কৃতজ্ঞতা: ফ্রিপিক
You must be logged in to post a comment.