গর্ভাবস্থায় বিমান ভ্রমণ নিরাপদ বলে মনে করা হয় এবং এতে বাচ্চার কোন ক্ষতির আশংকা নেই। এখানে দুটি গুরুত্বপূর্ণ অনুমান হলো-
১. আপনার গর্ভাবস্থায় কোন ঝুঁকি বা জটিলতা নেই এবং আপনি স্বাস্থ্যবান। এছাড়াও বায়ুর চাপ বা আর্দ্রতা পরিবর্তন আপনার উপর নেতিবাচক কোন প্রভাব ফেলে না।
২. বিমান ভ্রমণের কারণে আপনার গর্ভপাত, হঠাৎ প্রসববেদনা বা পানিভাঙ্গার মতো কোন কিছু ঘটবে এমন আশংকা না থাকা।
বিমান ভ্রমণের নিরাপদ সময় কোনটি?
- ৩৭ সপ্তাহের আগে – যদি একক গর্ভাবস্থা হয় এবং কোন জটিলতা না থাকে। সাধারণত ৩৭ সপ্তাহের পর যেকোন দিন প্রসব বেদনা শুরু হতে পারে। তাই এসময় বিমান ভ্রমণ এড়িয়ে চলা উত্তম।
- ৩২ সপ্তাহের আগে – যদি যমজ গর্ভাবস্থা হয়।
সাধারণত বিমান সংস্থাগুলো গর্ভবতীদের ৩৬ সপ্তাহের পর বিমান ভ্রমণ করতে দেয় না এবং যমজ গর্ভাবস্থার ক্ষেত্রে এই সীমা ৩২ সপ্তাহ। জটিলতা এড়াতে অনেকসময় এই সময় সীমার আগেই এয়ারলাইন্স গর্ভবতীকে বিমান ভ্রমণে বাঁধা দিতে পারে। তাই আগে থেকে তাদের গর্ভাবস্থা সম্পর্কে জানান এবং তাদের নিয়মকানুন জেনে নিন। গর্ভবতীর জন্য তারা যদি কোন বিশেষ সুবিধা দিয়ে থাকে তাহলে সেটা গ্রহণের চেষ্টা করা যেতে পারে।
কীভাবে প্রস্তুতি নিবেন?
প্রথমত আপনার ডাক্তারের (গাইনি বিশেষজ্ঞ) সাথে কথা বলুন। তাঁকে জানান আপনি বিমানে ভ্রমণের পরিকল্পনা করছেন এবং তার পরামর্শ নিন।
অনেক সম্ভবা মা তাদের গর্ভধারণের প্রথম ১২ থেকে ১৫ সপ্তাহে বিমান ভ্রমণ এড়িয়ে চলেন, কারণ এসময় ক্লান্তি ও বমিভাব প্রবল থাকে এবং বিমান ভ্রমন এই সমস্যাগুলো বাড়িয়ে দিতে পারে। বিষয়টি বিবেচনায় রাখুন।
বাদবাকি প্রস্তুতি এরকম:
১. বিমান সংস্থার সংক্রান্ত নিয়ম বা বিধিনিষেধ জেনে নিন।
২. প্রয়োজনে ডাক্তারি সনদ নিন।
৩. নিয়মিত সেবন করছেন এমন ঔষুধ সাথে নিন।
৪. ঢিলেঢালা জামা পড়ুন।
৫. গর্ভধারণ সংক্রান্ত যে বই বা নোট পড়ছেন তা নিন।
ঝুঁকিগুলো কী কী?
অনেকের কাছেই বিমান ভ্রমণের কিছু দিক আছে যেটা সুখকর বলা যায় না। যেমন উড়ন্ত বিমানের ভেতরের বায়ুচাপ যেটা কানে প্রভাব ফেলে বা দীর্ঘসময় বসে থাকা। এ বিষয়গুলো গর্ভবতী মা’র জন্যও প্রযোজ্য। এর সংক্ষিপ্ত একটি তালিকা এরকম:
- দীর্ঘসময় বসে থাকার কারণে পায়ে পানি জমা এবং ফলশ্রুতিতে পা ব্যথা বা Swelling
- নাকে সর্দি হয়ে নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং বিমানের বায়ুচাপের কারণে কান অস্বস্তি।
- আপনার যদি Motion sickness থাকে তাহলে বিমান ভ্রমণ আপনার বমিভাবকে প্রবল করতে পারে।
- রক্ত জমাট বাঁধা বা Deep Vein Thrombosis (DVT)
ডিভিটি (DVT) কী এবং কীভাবে ঝুঁকি কমানো যায়?
পায়ে বা তলপেটে রক্ত জমাট বাধাকে ডিভিটি বলে এবং এই রক্ত ফুসফুসে গেলে জীবননাশের ঝুঁকি থাকে। নারীদের মাঝে গর্ভাবস্থায় ও প্রসবের প্রথম ৬ সপ্তাহে ডিভিটির ঝুঁকি বেশি থাকে। বিমানে দীর্ঘসময় বসে থাকার কারণে এই ঝুঁকি বাড়তে পারে। সাধারণত ৪ ঘন্টার বেশি বিমান ভ্রমণে এই ঝুঁকি বাড়ে।
এই ঝুঁকি রোধে নিচের পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে:
- ঢিলেঢালা কাপড় পরিধান করা
- করিডোরের সীটে বসা এবং প্রতি ৩০ মিনিটে একবার হাঁটা
- সীটে বসে ব্যয়াম করা। সাধারণত বিমানে এ সংক্রান্ত উপদেশ দিয়ে থাকে।
- নিয়মিত বিরতিতে পানি পান করা
বিমান বন্দরের সিকিউরিটি স্ক্যানার
অনেক সতর্ক গর্ভবতী বিমানবন্দরের সিকিউরিটি স্ক্যানার নিয়ে দুশ্চিন্তা করেন এই ভেবে যে হয়তো এই স্ক্যানার গর্ভস্থ সন্তানের ক্ষতির কারণ হবে। আশার কথা হলো, এই ধরনের স্ক্যানার মা বা সন্তান কারোর জন্যই ক্ষতিকর নয়।
বিমানের সীটবেল্ট
বিমানে সীটবেল্ট পরিধান বাধ্যতামূলক। গর্ভবতীর শরীরের বর্ধিত আকৃতির কারণে সীটবেল্ট পড়া একটু কঠিন, তবে আপনি সহজেই একজন কেবিন ক্রু’র সহায়তা নিতে পারেন।
বিমানেই প্রসব
বিমান ভ্রমণের সময় প্রসব বেদনা উঠার সম্ভাবনা বেশ কম, অন্তত পরিসংখ্যান সেটা বলে। তাই বলে বিমানে পানি ভাঙ্গা বা প্রসব বেদনা হবে না এমন নয়। যদি এরকম হয়, তাহলে প্রথমেই দেখা হবে ক্রু মেম্বার বা যাত্রীদের মাঝে কেউ আপনাকে সহায়তা করার মতো প্রশিক্ষিত আছে কি না। এরকম কাউকে পাওয়া না গেলে হয়তো বিমানকে নিকটস্থ কোন বিমানবন্দরে নামানোর জন্য দরকার হতে পারে।
লেখাটি রিভিউ করেছেন –
ডাঃ সারওয়াত জাবীন আনিকা
এমবিবিএস
KMC (IMCS) – এ বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত
সম্পাদনা: হাবিবা মুবাশ্বেরা
ছবি কৃতজ্ঞতা: Travel vector by freepik
তথ্যসূত্র
১. আরসিওজি
২. এনএইচএস
৩. হেলথলাইন