প্যারেন্টিং এর যে স্টেইজটি আজকের সময়ে সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জিং, সেটি হচ্ছে ‘টিনেইজ প্যারেন্টিং’। খুব কাছ থেকে আমি এমন কিছু টিনেইজ দেখেছি, যারা কিনা আগাগোড়া ইসলামিক পরিবারে বড় হয়েও পরিবারের শিক্ষা ধরে রাখতে পারেনি। যদিও বাবামায়েরা এসব বিষয়ে দুঃখ করতে গিয়ে ব্যর্থতার দায়ভার সবটুকু সন্তানের উপরই চাপিয়ে দিয়ে থাকেন, তবে প্রকৃত সত্য অনেকক্ষেত্রেই বিপরীত। সন্তান তো চারাগাছের মত, কোন চারা বৈরি পরিবেশেও তরতর করে করে বেড়ে ওঠে, এমনকি পাথুরে মাটিতেও কিছু চারাগাছ বড় হয়, আবার কোন চারাগাছকে বাচিয়ে রাখতে অনেক বেশি কসরত করতে হয়- সঠিক পরিবেশ, পর্যাপ্ত আলো বাতাস, নিয়মিত পানি দেয়া, সার দেয়া, আগাছা মাড়ানো…. কোনকিছুর অভাব হলেই গাছটি নেতিয়ে পড়ে। তাই পাথুরে মাটিতে জন্মানো গাছকে স্ট্যাণ্ডার্ড ধরে নিলে কিন্তু মালি ঠিক বিপদে পড়ে যাবেন, ওটা কেবল ব্যতিক্রম আর ব্যতিক্রম কখনো উদাহরণ হতে পারেনা। একজন সচেতন মালীকে সুন্দর বাগান করার জন্য প্রথম থেকেই সবরকম প্রস্তুতি নিতে হয়- ঐ অতিনাজুক চারাগাছটির জন্য হলেও। কেননা বৈরি হাওয়ায় প্রথম দুই জাতের চারাগাছ বেচে রইলেও তৃতীয় জাতের চারাগাছ সমূলে উপড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা৷ প্যারেন্টিং বিষয়টিও তেমন: আপনি ইসলামিক না হলেও আল্লাহর ইচ্ছায় আপনার সন্তান ইসলামিক হতে পারে, কারণ পাথুরে মাটিতেও আল্লাহর ইচ্ছায় গাছ হয়। আবার দক্ষ প্যারেন্টিং ছাড়াও ইসলামিক বাবা-মায়ের অনেক সন্তান ঠিকই সঠিক পথ চিনে নিবে। কিন্তু নাজুক চারাগাছের মত কিছু সন্তান আছে, এবং পার্সেন্টেজে এরাই এগিয়ে। তাদের সঠিকভাবে বেড়ে ওঠার জন্য প্রয়োজন ‘দক্ষ ও পরিকল্পিত প্যারেন্টিং’, নচেৎ এই সন্তানেরা চলার পথে যেকোন সময় হোচট খেয়ে পড়ে যাবে।

সন্তানের সেই পড়ে যাওয়ার ব্যর্থতাটুকু সন্তানের ঘাড়ে না চাপিয়ে আগে নিজের ঘাড়ে নিতে শিখুন, তাহলেই হিসেব সহজে মিলবে। আমি একটা কথা বিশ্বাস করে থাকি, সন্তানের তারবিয়াতের শুরুতেই নূহ ও লূত আলাইহিমাসসালামের উপমা মন থেকে একদম ঝেড়ে ফেলুন, নচেৎ সন্তানকে সঠিক তারবিয়াত দিতে না পারার দায়ভার আপনি নিজের কাধে না নিয়ে ক্ষণে ক্ষণে ঐ উপমাই জপতে থাকবেন, ফলে নিজের ভুলটুকু খুজে বের করা ও শোধরানোর সুযোগ আর হবেনা৷ নূহ আলাইহিস সালাম আহল ও ক্বওমকে হিদায়াত দেয়ার জন্য সাড়ে নয়শ’ বছর চেষ্টা করেছেন, এই আমি আপনি যে নবীর উপমা টানছি, আমরা কি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি, আমার সন্তানের তারবিয়াতের জন্য আমি কত বছর চেষ্টা করেছি? কতটা সঠিক উপায়ে করেছি?

আরেকটা কথা! অনেক মা-বাবাই কিন্তু গর্ব করে এমনটি বলে থাকেন: আমরা তো অত ধর্ম কর্ম বুঝতাম না, কই আমার সন্তানতো ঠিকই ধার্মিক হয়েছে?

এর উত্তর কিন্তু আমি দিয়েছি: ঐযে পাথুরে মাটির বৃক্ষ…

আবার অনেক মা-বাবা বুক ফুলিয়ে বলেন: আমার দুটো সন্তান কোনদিন আমার কোন কথা অমান্য করেনি, ওদেরকে বড় করতে আমার তেমন কষ্টও হয়নি। মানুষের সন্তান কি করে এত বেয়াড়া হয়?

এর উত্তরে আমি বলবো: আল্লাহর শোকর করুন, তিনি আপনাকে প্রথম দুই ক্যাটাগরির সন্তান দিয়েছেন৷ আপনার আর একটি সন্তান থাকলেই সে যে তৃতীয় ক্যাটাগরির হতোনা, এর নিশ্চয়তা কে দিলো? আমি তো এমন ভুরি ভুরি পরিবার দেখেছি যেখানে বড় সন্তানদের আদব-আখলাক্বের সাথে ছোটগুলোর একদম মিল নেই, ঐযে ‘জেনারেশন গ্যাপ’!

যাহোক, তো যেসব বাবা-মায়েরা তাদের অতি ভদ্র সন্তানটিকে টিনেইজ বয়সে হুট করে বিগড়ে যেতে দেখে ‘হায় হায়’ করা শুরু করেন, তাদের জন্য সন্তানের তারবিয়াতের একটা রোড ম্যাপ আছে, যেটি আমি পেয়েছি মুহাম্মাদ আকরাম ও রিদা বশীরের ‘টিনেইজ সংক্রান্ত একটি বই থেকে। একদম শুরু থেকেই যদি এভাবে পরিকল্পনা করে তারবিয়াহ শুরু করা যায়, তবে ইন শা আল্লাহ, টিনেইজ বয়সে গিয়ে আফসোস করা লাগবেনা৷ রোডম্যাপটি কেমন?

৬ টি ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার সমন্বয়েই এই রোডম্যাপ। সামান্য ব্যাখ্যাসহ সেগুলো বলছি, ইনশাআল্লাহ:

১. তারবিয়াহ আগেভাগে শুরু করুন:
আমি প্যারেন্টিং নিয়ে লেখা আগের পোস্টে এই বিষয়টি বিস্তারিতভাবে বলার চেষ্টা করেছি। মোদ্দাকথা এমন যে, জন্মের পর থেকে মোটামুটি ১০ বছর বয়স পর্যন্ত একটি সন্তানের চিন্তার কেন্দ্রবিন্দু তার মা-বাবা, তার প্রতিটি কথায়, কাজে, চিন্তায় সে বাবা-মায়ের সমর্থন আশা করে, তাদেরকে খুশি করাই তার আরাধ্য। কিন্তু পরবর্তী স্টেইজে, মোটামুটি ১০ বছরের পর থেকে বন্ধুর গুরুত্ব বাবা-মায়ের উপরে ওঠা শুরু করে এবং এক পর্যায়ে তারা বন্ধু ও সহপাঠীদের কথাকেই সবচে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে, সবকছুতে তাদের সমর্থন চায়; বাবা-মা ধীরে ধীরে তাদের জগৎ থেকে দূরে সরে যেতে থাকে। বলা হচ্ছে যে, সন্তানের জীবনের এই প্রথম পর্যায়টিকে যে বাবা-মা কাজে লাগাতে পারবেন; সন্তানের মাঝে নৈতিকতা ও আদর্শের বীজ বুনে দিতে পারবেন, এটি পরবর্তী স্টেইজে তাদের জন্য ঢাল হয়ে সুরক্ষা দেবে। অনেকটা ইম্যুন সিস্টেমের মত, যে সন্তানের ইম্যুন সিস্টেম যত শক্তিশালী হবে, সে বন্ধু ও সমাজের নেতিবাচক প্রভাব থেকে নিজেকে তত বেশি রক্ষা করতে পারবে। আর যার ইম্যুন সিস্টেম এমনিতেই দুর্বল, সে তো সামান্য ঝড়ো বাতাসেই সমূলে উৎপাটিত হবে, স্রোতের সাথে নিজেকে পুরোটাই বিকিয়ে দেবে। তারমানে, তারবিয়াহ শুরু হবে কবে থেকে? ‘ও তো এখন ছোট, আরেকটু বড় হোক’? উহু, তারবয়াহ শুরুর সময়টা এখনই, একদম ছোট থেকেই একটু একটু করে গাথুনি দিতে হবে। যেমন, অনেক বাবা-মা সন্তানকে শিশুবয়সে কুরআন হিফজ করিয়েই মনে করে বসেন যে সন্তান দ্বীনি হয়ে যাবে। অথচ সন্তানকে যদি কুরআনে কী বলা হয়েছে, তা শেখানো না যায়, তবে শুধু মুখস্থবিদ্যা তাকে যুগের সয়লাব থেকে রক্ষা করতে পারবেনা।

২. সন্তানের সাথে বন্ধুভাবাপন্ন হোন:
সন্তানের সাথে এমন বন্ধুসুলভ সম্পর্ক গড়ে তুলুন, যেন সে আপনার কাছে তার মনের কথাগুলো বলতে পারে, বন্ধুর মতই বিশ্বস্ত ভাবতে পারে, তার যেকোন সমস্যা নিয়ে আপনার সাথে খোলাখুলি আলোচনা করতে পারে। টিনেইজ বয়সে সন্তানের ভেতরকার চলমান দ্বন্দ্ব-সংঘাতের বিষয়টি জানুন, কথায় কথায় সন্তানকে ‘বেয়াদব’ আখ্যা না দিয়ে তার অবস্থান থেকে তাকে বুঝতে চেষ্টা করুন। সন্তানের বলা যেকোন কথা নিয়েই জাজমেন্টাল হতে হবে তা নয়, অনেক সময় তাদের কথাগুলো মন দিয়ে শোনার জন্য একজন শ্রোতা প্রয়োজন, সেই জায়গাটুকু ভুল কারো জন্য ছেড়ে না দিয়ে নিজেরা নিন। তার ভেতর যেন এমন কোন শূন্যতার অনুভূতি সৃষ্টি না হয়, যেটা পূরণে সে ভুল মানুষ ও ভুল পথ বেছে নেয়। তাকে বোঝাতে চেষ্টা করুন, সে আপনাদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বিশেষ করে বাবারা অনেকসময় কেয়ারলেস হয়ে থাকেন, কিন্তু বাবাকেও এক্ষেত্রে অগ্রণী হতে হবে। প্রতিদিন সন্তান স্কুল থেকে ফেরার পর স্কুলে কী কী হয়েছে তা নিয়ে গল্প করুন৷ রাতের খাবারে সন্তানদের একসাথে নিয়ে বসুন। সন্তানকে প্রতি সপ্তাহে কোথাও ঘুরতে নিয়ে যান। কোন বিষয়ে সমাজ ও ধর্মের মাঝে কনফ্লিক্ট তৈরি হলে সন্তানের কাছে ইসলামের সৌন্দর্যটি তুলে ধরুন, সুন্দর করে যুক্তি দিয়ে তার বোধগম্যভাবে তার প্রশ্নটির উত্তর দিন। মোটকথা, সন্তানের কাছে নিজের জন্য এমন একটি স্থান তৈরি করুন, সে যেন সুখে-দুঃখে, বিপদে- আপদে, যেকোন সমস্যায় আপনার সাথে তার কথাগুলো শেয়ার করার জন্য আস্থাভাজন হিসেবে আপনাকেই বেছে নেয়।

৩. সন্তানের তারবিয়াতের ব্যাপারে বাবা-মা উভয় মিলে একটি ‘কমন ভিশন’ তৈরি করুন:
আজকের শিশুই আগামী দিনের পূর্ণবয়স্ক মানুষ, তাই একজন মানুষ হিসেবে তাকে বিশ বছর পরে কেমন দেখতে চান, নৈতিকতা ও ধার্মিকতার কী কী বীজ তার মাঝে বুনে দিতে চান…. সেগুলো নিয়ে দুজন মিলে কিছু কমন গোল/ভিশান সেট করুন। সম্ভব হলে তা একটি কাগজে স্পষ্ট অক্ষরে লিখে চোখের সামনে যেমন- বোর্ডে, ডেস্কে, ফ্রিজের দরজায় টাঙিয়ে রাখুন, যেন বার বার তা আপনাদের জন্যই রিমাইন্ডার হিসেবে কাজ করে। শুধু নিজেরাই নয়, সন্তানদের সাথেও এ নিয়ে আলোচনা করুন, তাদেরকে আপনারা কেমন মানুষ হিসেবে দেখতে চান, তা জানিয়ে দিন, মাঝে মাঝে মনে করিয়ে দিন। এতে করে তারাও নিজ জীবনের উদ্দেশ্য নিয়ে সচেতন ভাবে চিন্তা করার সুযোগ পাবে, আপনাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তারাই সাহায্য করবে।

৪. সন্তানের তারবিয়াহ প্রক্রিয়ায় বাবা-মা উভয়ের সক্রিয় অংশগ্রহণ:
আমরা জানি, প্যারেন্টিং বাবা কিংবা মায়ের কোন বিচ্ছিন্ন প্রচেষ্টা নয়, এটি উভয়ের মিলিত একটি প্রয়াসের নাম। আগের পয়েন্টেই আমরা বলেছি, বাবা-মা উভয়ে মিলে সন্তানের তারবিয়াহ বিষয়ে একটা ভিশান ও কিছু গোল সেট করবেন। সেগুলো কীভাবে এপ্লাই করবেন, সে বিষয়েও উভয়ের একমত হওয়াটা জরুরি। কেননা, দুজনের মতে ভিন্নতা থাকলে সন্তানের তারবিয়াহ সঠিকভাবে করা কঠিন হবে। তেমনি, এই কাজে উভয়ের অংশগ্রহণও জরুরী, দুজনকেই একই দায়িত্ব নিতে হবে তা নয়, ভাগাভাগি করেও নেয়া যেতে পারে, কিন্তু কোন এক পক্ষ নিষ্ক্রিয় থাকলে তা কার্যকর করা কঠিন।

যেমন, অনেক পরিবারেই বাবা তার দায়িত্ব এড়িয়ে যান এই ভেবে যে, সন্তান সামলানো শুধু মায়ের কাজ, বাবার দায়িত্ব অর্থের যোগান দেয়া। আবার মা-ও সন্তানের কোন ভুল আচরণ দেখলে বলে: দাড়াও, তোমার বাবা আসলে সব বলে দেবো। দায়িত্ব ঠেলাঠেলির এই গতানুগতিক অভ্যাস মোটেও পজিটিভ নয়।

একটা মেয়ের জন্য মা-ই তার আদর্শ, একটা ছেলের জন্য তেমন আদর্শ তার বাবা। কিন্তু মা কিংবা বাবা যদি সন্তানকে সেই আদর্শের জায়গাটুকু ধরে রাখতে ব্যর্থ হন, তবে সেই স্থান দখল করে নেবে কোন খেলোয়াড়, কোন মডেল কিংবা সিনেমার এক্টর/এক্ট্রেস। এজন্য বাবা-মা উভয়কেই সন্তানের তারবিয়াহর ব্যাপারে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে।

৫. সন্তানকে আত্নবিশ্বাসী করে গড়ে তুলুন:
সন্তানকে নিজের ব্যাপারে, নিজের বিশ্বাসের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী করে তুলুন। তা কীভাবে? আগেও আলোচনা করা হয়েছে। সন্তানের মধ্যে ছোটবেলা থেকেই নৈতিকতার বীজ বুনে দিন, ইসলামের বিধানগুলোর সৌন্দর্য তুলে ধরুন, ইসলামী আচরনগুলোকে দৈনন্দিন অভ্যাসে পরিণত করুন। এভাবে একটা সন্তান যখন তার বিশ্বাস সম্পর্কে জানতে জানতে, মানতে মানতে বড় হবে, তখন টিনেইজে গিয়ে বন্ধু কিংবা সমাজের নেতিবাচক প্রভাবেও সে নিজেকে আগলে রাখতে পারবে। আর যে সন্তানটি আত্মবিশ্বাসী নয়, নিজের ধর্ম ও বিশ্বাস নিয়ে নিজেই সন্দিহান, প্রতিকূল পরবেশে যে সে খুব সহজেই নিজেকে বদলে ফেলবে, তেমনটিই স্বাভাবিক। দ্বীনের উপর টিকে থাকার জন্য তাই একটা দৃঢ় ও বলিষ্ঠ মানসিকতা, আত্মবিশ্বাস খুব জরুরী। আর সেই বিশ্বাসের ভিত সচেতন মা-বাবার হাতেই প্রথম নির্মিত হয়।

৬. সন্তানের ইসলামী জ্ঞানকে দৃঢ়বিশ্বাসে পরিণত করুন:
সন্তানের অর্জিত ইসলামী জ্ঞান যেন বইসর্বস্ব না হয়, সেদিকে খুব খেয়াল রাখা দরকার। জ্ঞানার্জন, তা জীবনে প্রয়োগ ও অর্জিত জ্ঞান নিয়ে চিন্তা-ফিকির ছাড়া তেমন কাজে আসেনা। যেমন, কুরআনের জ্ঞান ব্যতীত শুধু হিফয করাটা সন্তানকে ভেতর থেকে বদলাতে পারেনা। এজন্য অর্জিত প্রতিটি জ্ঞান যেন তার বিশ্বাসকে দৃঢ়্মূল করে, বাধার মুখে দৃঢ় মনোবল নিয়ে টিকে থাকতে সাহায্য করে, এটিই উদ্দেশ্য হওয়া উচিৎ। একটু চোখ কান খোলা রাখলেই আমরা দেখতে পাবো, কুরআনের হাফেয কিংবা মাদ্রাসা ফারেগ আলেম হয়েও মাদকাসক্ত, নারী আসক্ত, পর্ন আসক্ত, এমনকি সমকামী হওয়ারও কত ভুরি ভুরি নজির আছে। এজন্য সন্তানের ইলম যেন তাকে কেবল লিবাসে নয়, আমলে-আখলাক্বে-বিশ্বাসে ভেতর থেকে পরিবর্তন করতে পারে, সেটি খেয়াল রাখা দরকার। ( এ বিষয় নিয়ে সামনে আরও আলোচনা করার ইচ্ছা আছে ইনশাআল্লাহ।)

তবে এতকিছুর পরও আমাদের দুটি বিষয় মাথায় না রাখলেই নয়:

i. পরিবেশ ও সোহবত: সন্তানকে আমরা যতভাবেই দ্বীনি তারবিয়াত দিই না কেন, তার বেড়ে ওঠার কিংবা স্কুলের পরিবেশ যদি কলুষিত হয়, বন্ধুরা যদি খারাপ অভ্যাসে অভ্যস্ত হয়, তবে তার জন্য বাবা-মায়ের দেয়া শিক্ষা ধরে রাখা কঠিন হবে। দশ বছরের পর থেকে সন্তানের কাছে যেখানে বন্ধুদের মতামতের মূল্যই বেশি হয়ে দাঁড়ায়, সেখানে বন্ধুরা যদি অসৎ হয়, তবে সেই সন্তানের জন্য সততা বজায় রাখা অগ্নিপরীক্ষার সমান হয়ে যাবে। অজানাকে জানা, নতুনের প্রতি আকর্ষণ, বিধিনিষেধের বেড়াজাল ভেঙে ফেলাই তো কৈশোরের বৈশিষ্ট্য। তাই সন্তানের পরিবেশ ও সোহবত অনুকূলে রাখা খুব জরুরী। অন্য সব ঠিক থাকার পরও শুধু খারাপ পরিবেশ/সোহবতের কারণেই একটা সন্তান অধপতনের শেষসীমায় পৌছে যেতে পারে।

ii. দু’আ: দু’আ মুমিনের সবচে বড় অস্ত্র। অন্য সব অস্ত্র যেখানে বিফল, দু’আ সেখানেও সফল। এমন অনেক মা-বাবাকে দেখেছি, শুধু তাদের শেষ রাতের দু’আ আর চোখের পানির বিনিময়েই একদম বখে যাওয়া সন্তানটিও একটা বয়সে সঠিক পথে ফিরে এসেছে৷ তাই যিনি কোন উপায়ই কাজে লাগাতে পারছেন না, তিনি যেন দু’আর ক্ষমতা অবমূল্যায়ন না করেন। It is the last but most precious weapon of a believer.

লেখাটি কি আপনার উপকারে এসেছে?
হ্যানা