আমাদের কথা

আমরা এতক্ষণ কিছু মুসলিম মায়েদের প্রসব পরবর্তী সময়টা নিয়ে অভিজ্ঞতার কথা পড়লাম। জানলাম যে, প্রায় সব মায়েরাই কিছুটা বিষণ্ণতা, মানসিক টানাপোড়েনের ভেতর দিয়ে যান এই সময়। তবে কিছু বিষয়ের ওপর নির্ভর করে এই সমস্যা অল্প বা বেশি হয়ে থাকে।

অল্পতেই কাটিয়ে ওঠা যায় যদি এই নিয়ে আগে থেকে জানা থাকে; মা নিজে সচেতন থাকেন ও স্বামীসহ পরিবারের অন্যদের সহযোগিতা পাওয়া যায়, মায়ের নিজের শারীরিক, মানসিক বিশ্রামের ব্যবস্থা থাকে। সেই সাথে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, কিছু আমল সবসময় জারি রাখা। সালাত যখন থাকে না তখনও যিকির, দুয়া, কুরআন মুখস্ত থেকে পড়া, সকাল-সন্ধ্যার দুয়া ও সূরাগুলো পড়া, কুরআন তিলাওয়াত শোনা, তাফসির পড়া, আলিম ও দাঈদের লেকচার শোনা ইত্যাদি চালিয়ে গেলে অনেক আত্মিক ও মানসিক উপকার হয়।

গর্ভাবস্থা, প্রসব পরবর্তী সময় ও বাচ্চার যত্ন নিয়ে গর্ভাবস্থার শুরু থেকে বাচ্চা ধীরে ধীরে বড় হওয়ার সময়টায় নিয়মিত পড়াশোনা করার গুরুত্ব অপরিসীম। অনেক সমস্যাই সহজ হয়ে আসে যদি আমরা পড়ার মাধ্যমে জানতে সচেষ্ট হই। গর্ভাবস্থায় ধাপে ধাপে কী হতে পারে, প্রসব পরবর্তী সমস্যাগুলো ও যত্ন নিয়ে জানা, বাচ্চার বিভিন্ন বয়সের পরিবর্তনগুলো নিয়ে নিয়মিত পড়াশোনার মাঝে থাকলে অনেক মানসিক শক্তি পাওয়া যায়।

আগে মা হওয়া অভিজ্ঞ ও বুঝদার মানুষদের সাথে আলোচনা করাও অনেক উপকারে আসে। গর্ভাবস্থায়, বিশেষ করে শেষের দিকে এমন অনেক সাধারণ ঘরোয়া কাজই করা কঠিন হয়ে যায় যা আগে অত্যন্ত সহজতার সাথেই করা যেত। এই সময়টা শরীরের ওপর জোর চলে না। মানসিক শক্তি দিয়ে সব কাজ করে ফেলা যায় না, সেটা করা উচিতও না। প্রসব পরবর্তী সময়টায় নতুন বাবুর দেখভালে মা বিহ্বল হয়ে পড়েন। প্রথমবারের মতো উপলব্ধি করেন যে মাতৃত্ব একটা চব্বিশ ঘন্টার কাজ। ফলে একটা দীর্ঘ সময় কেটে যায় যখন মায়ের কাছে মনে হয় যে তিনি কোন কিছুই ভালো করে করতে পারছেন না, হোক সেটা ঘরকন্না বা নিজের পড়াশোনা, কাজ। এ কারণেও হতাশা আসে, শরীরকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম দেয়ার কথা ভুলে যান অনেকে।

এই সময় নিজের সাথে সবর করা খুবই জরুরী। নিজের স্বপ্নগুলো পূরণে কাজ করা থেকে একটা ব্রেক নেয়া প্রয়োজন হয় এই সময়। যারা বাইরে গিয়ে চাকরি করেন তারা এই সময় মাতৃত্বকালীন ছুটি পান। যাদের স্বপ্নগুলো ইসলামি জ্ঞান অর্জন করা, ভালো মা, ভালো স্ত্রী হওয়া ইত্যাদি হয় তাদেরও নতুন পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নিতে নিজেকে সময় দেয়া প্রয়োজন। প্রথম মাস খানেক নবজাতকের কোন নির্দিষ্ট রুটিন থাকে না। তখন মা নিজের জন্য নিয়মিত সময় বের করতে পারেন না। দৈনিক বড় জোর আধা ঘন্টা পাওয়া যেতে পারে নিজের কিছু শেখা, জানা বা চর্চা করার জন্য। তবে যে পদ্ধতিটা বেশ কার্যকর সেটা হচ্ছে বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানোর সময়, ঘুম পাড়ানোর সময় আগের অর্জিত জ্ঞানের চর্চা চালিয়ে যাওয়া যেতে পারে ও পাশাপাশি করা যায় এমন কোন কাজ করা যেতে পারে। যেমন কুরআনের একটা আয়াত মুখস্ত করা, আগের মুখস্ত করা অংশ রিভিশন দেয়া, আরবী ভাষা নিয়ে যা জানেন তা রিভিশন করা ইত্যাদি। তাহলে মায়ের মনে হবে যে তিনি লক্ষ্যচ্যুত হননি।

নিজের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে জ্ঞান রাখাও আল্লাহর একটা রহমত।

এরপর যখন মা সালাত আদায় করতে পারবে তখন একটা রুটিন তৈরি হওয়া সহজ হয়ে যাবে। আস্তে আস্তে বাচ্চারও একটা রুটিন তৈরি হয়ে যায়। তখন থেকে শুরু করে সময়ের সাথে সাথে আস্তে আস্তে মা দৈনিক এক ঘণ্টা থেকে দেড়-দুই ঘণ্টা নিজের জন্য বের করে নিতে পারবেন।

আমরা আরও যা ভুলে যাই সেটা হচ্ছে ইসলামি জ্ঞান অর্জন করা, ভালো মা হওয়া এসব অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ ব্যপার। এটা এমন না যে ছয় মাসের কোর্স করলাম আর একটা বিষয় সম্পর্কে জেনে গেলাম। এখানে নিজের সাথে সবর করা, নিজের পরিস্থিতি বুঝে কখনো ধীরে কখনো পূর্ণ উদ্যমে এগিয়ে চলার মতো বুঝটা থাকা খুব জরুরী।

আরও যে বিষয়টা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে তা হচ্ছে, মা কিভাবে বাচ্চা জন্ম দিলেন সেই প্রক্রিয়াটা একটা বিশাল মানসিক প্রভাব ফেলে তার ওপর। গবেষণায় দেখা গেছে যেসব মায়েদের সিজারিয়ান প্রসব হয় তাদের স্বাভাবিকভাবে প্রসব করা মায়েদের তুলনায় পিপিডি বেশি হয়ে থাকে। আরও জানা প্রয়োজন যে আপনার পছন্দমাফিক প্রসব করার প্ল্যানে কোন কারণে হেরফের হতেও পারে। আবার যেসব মায়েরা স্বাভাবিক প্রসবের সময়ও অনেক কষ্টের ভেতর দিয়ে যান তাদের ওপরও এর একটা মানসিক প্রভাব পড়ে। সবকিছু ঠিকঠাক মতো হলেও প্রসব পরবর্তী সময়ে মা কিছু মাত্রায় হরমোনের উঠা-পড়া ও মানসিক টানাপোড়েনের ভেতর দিয়ে যাবেন এটাই স্বাভাবিক। তাই এই বিষয়েও মায়েদের মাঝে সচেতনতার প্রয়োজন আছে।

মায়ের উচিত কাছের মানুষদের সাথে মনের ভেতর কী চলছে তা শেয়ার করা। যদি মনে হয় যে আপনার মেডিকেল সহায়তা প্রয়োজন তাহলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে দ্বিধা করবেন না।

 

প্রসব পরবর্তী সময়ের সমস্যা, যত্ন ও বিষণ্ণতা নিয়ে আরও পড়তে পারেন এই লেখাগুলোঃ

 

এই আর্টিকেল তৈরিতে সহযোগিতা করেছেনঃ

রাবেয়া রওশীন

নাঈমা আলমগীর

সারওয়াত জাবিন আনিকা

হাসনীন চৌধুরী    

 

 

লেখাটি কি আপনার উপকারে এসেছে?
হ্যানা