আমানি চাইল্ডবার্থ এডুকেটর এবং দৌলা কি আমার জানাই ছিলনা ২০২২ সালের আগে!
কিভাবে শুরু হলো যাত্রা
২০১৯ থেকেই pregnancy নিয়ে টুকটাক পড়াশোনা করতে করতে অনেক বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছিলাম এই বিষয় নিয়ে। কিন্তু তখন দেশের মাটিতে বসে অনলাইনে বিদেশী এই ধরণের কোন ট্রেইনিং নেয়ার কোন সুযোগ ছিলনা। সুযোগটা পেতে পেতে এসে গেল ২০২২ সাল। যখন কিনা করোনার কারণে অনেক কিছুই অনলাইনে হচ্ছে। জানতে পারলাম আমানি বার্থের কথা। আমানি বার্থ এর বইটা অনলাইনে কিনে পড়াও শুরু করলাম। বই পড়তে গিয়ে মনে হলো আরে আমারতো এই টেইনিং নিতে হবে। সাথে সাথেই ওদের ওয়েবসাইটে এনরোল করলাম। আসলে সবই আল্লাহ আমার জন্য খাপে খাপে মিলিয়ে দিচ্ছিলো। রেজিস্ট্রেশন করেছিলাম ইন্টারন্যাশনাল প্লাটফর্মে। কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছায় সব বাঙ্গালী আপুদের একটা ব্যাচ পেয়ে গেলাম।
ওয়ার্কশপ এবং সব প্রি-রিকুইজিট সাবমিশন
আমাদের আমানি বার্থের ক্লাস শুরু হলো ২০২২ এর অক্টোবরে। আমানির প্রতিষ্ঠাতা সিস্টার আইশা আল হাজ্জারের সাথে ক্লাস করাটা একটা স্বপ্নের মতো ছিলো। ওনার জ্ঞান অনেক অনুপ্রাণিত করতো প্রাকৃতিক প্রসব নিয়ে কাজ করতে। উনি অসাধারণ একজন শিক্ষিকা, বারাকাল্লাহ। প্রতি সোমবার সকাল ৭টা থেকে ১০টা ক্লাস করতাম। টানা ১০ সপ্তাহের ওয়ার্কশপ থেকে অনেক কিছু শেখা, অনেক স্মৃতি। ক্লাশ শেষ হয়ে গেলেও কষ্ট লাগতো। ক্লাসের পরপর সব পরীক্ষা গুলো খুব আগ্রহ নিয়ে দিতাম। ক্লাস শেষ হয়েছিল নভেম্বরে। এরপর শুরু হলো নির্ধারিত বই পড়া এবং পাশাপাশি পরীক্ষা দেয়া। ৪ টা বই পড়ে, পরীক্ষা দিয়ে শেষ করতে হয়েছিল মে ২০২৩ এর মধ্যে।
চাইল্ডবার্থ এডুকেটর প্র্যাক্টিকাল
এরপর শুরু হলো আরেক ধাপ। যেটা নিয়ে সবাই বেশ চিন্তিত ছিলাম। তা হলো গর্ভবতী মা খুঁজে বের করা যিনি আমার কাছ থেকে আমানি গর্ভকালীন শিক্ষা নিবেন। এটা ছিলো চাইল্ডবার্থ এডুকেটর প্র্যাক্টিকাল। আরেকটা ছিলো দৌলা প্র্যাক্টিকাল। এই দুই প্র্যাক্টিকালই সরাসরি হতে হবে। কোন অনলাইন হওয়া চলবেনা। তো এটা নিয়ে আমরা বড়ই বিপাকে ছিলাম। এখন গর্ভবতী মা কোথায় পাই যাকে বাসায় গিয়ে পড়াবো এবং যার লেবার এবং বার্থে সাথে থাকবো! আমি বলেছিলাম না আল্লাহ সব আমার জন্য খাপে খাপে মিলিয়ে দিচ্ছিলো? ঠিক তাই হলো আবার। আমার পরিচিত এক আপু যিনি মাত্রই অন্তঃসত্ত্বা হয়েছেন উনি আমাকে বললেন ‘আপু আমারতো অনলাইনে ক্লাস করতে ভালো লাগেনা, আমি আপনার কাছে সরাসরি পড়তে চাই আমানি বার্থ’। আলহামদুলিল্লাহ! আমি আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে কূল পেলাম না। আল্লাহ সঠিক সময়ে সবকিছু খাপে খাপে কেমন মিলিয়ে দিলেন। আপুর সাথে জুন মাসে গিয়ে দেখা করে ক্লাস কবে থেকে করবো তা ঠিক করে আসলাম। ক্লাস শুরু করলাম জুলাই থেকে। মজার বিষয় হচ্ছে আগে একজন মা’কে কিভাবে পাবো ভাবছিলাম, সেখানে দুইজন মা পেয়ে গেলাম আমানি বার্থ পড়ানোর জন্য। ওই বাসার মেয়ে এবং বৌ দুইজনই প্র্যাগনেন্ট ছিলো। দুইজনই ক্লাস করলো। মা’দের একটু তাড়া থাকাই ১০ সিটিং এর ক্লাস আমরা ৬ সিটিং এ ৩ সপ্তাহে শেষ করলাম আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ অনেক সহজ করে দিয়েছিল আমাদের জন্য।
ফাইনাল পরীক্ষা
এরপর শুরু হলো ফাইনাল পরীক্ষা। আমানির সিস্টেম হচ্ছে কেউ যদি একটা প্র্যাক্টিকাল আগে করতে পারে তাহলে ওটার জন্যই সার্টিফিকেইট দিয়ে দিবে। কারও শুধু চাইল্ডবার্থ এডুকেটর প্র্যাক্টিকাল হলে তাকে শুধু চাইল্ডবার্থ এডুকেটর সার্টিফিকেইট দিবে, আর কারও শুধু দৌলা প্র্যাক্টিকাল হলে তাকে দৌলার সার্টিফিকেইট দিয়ে দিবে। আর কারও দুইটাই হয়ে গেলে আলহামদুলিল্লাহ। তো আমার যেহেতু একটা হয়েছিল তাই আমি একটা নিয়েই ফাইনাল পরীক্ষা দেয়া শুরু করলাম। এই পরীক্ষার জন্য সময় দেয়া থাকে এক মাস। বড় একটা পরীক্ষা বলা যায়।
দৌলা সেবা প্র্যাক্টিকাল এবং সার্টিফিকেইশন
পরীক্ষা দিতে দিতেই মাতৃত্ব এর মাধ্যমে একটা ফিজিকাল দৌলা ক্লায়েন্ট পেয়ে গেলাম। এর আগেও আমি একজন ফিজিকাল দৌলা ক্লায়েন্ট পেয়েছিলাম, যার ডেলিভারি হয় জুলাইতে। কিন্তু ওনার সাথে ওনার লেবার পর্যন্ত থাকতে পেরেছিলাম। বার্থের সময় হাসপাতাল থেকে আমাকে ঢূকতে না দেয়ায় আর এটার মাধ্যমে দৌলা প্র্যাক্টিকাল সম্ভব হয়নি। তো যা বলছিলাম, আগস্টে আরেকজন ফিজিকাল দৌলা ক্লায়েন্ট পেয়ে গেলাম এবং কাকতালীয় ব্যাপার হচ্ছে আমি ঠিক যেদিন আমার সব পরীক্ষা শেষ করে সাবমিট করবো আমানিতে ঠিক সেদিনই ওনার পানি ভাংলো। আল্লাহর কি ইচ্ছা! তো আমি আমার সাবমিশন হোল্ড করলাম। গেলাম আপুকে দৌলা সেবা দিতে। আলহামদুলিল্লাহ ডাক্তার আপা ভালো মানুষ, যখন বললাম আমি মাতৃত্ব থেকে এসেছি আমাকে ঢুকতে দিল। কি সুন্দর ব্যবহার ওনার! আমাকে সব কিছু কি করছে, কেন করছে বোঝালো। এটা আমার জীবনের এতোটুকু সময় পর্যন্ত একটা না ভোলার মতো অভিজ্ঞতা। আল্লাহ যেন আমার জন্য সব সেট করে রেখেছিলো! বাসায় এসেই দৌলা প্র্যাক্টিকাল সাবমিট করলাম, ফাইনাল একজাম সাবমিট করলাম। সিস্টার আয়শাকে জানালাম সব করেছি। এবং আলহামদুলিল্লাহ উনি সব চেক করেই সাথে সাথে আমার সার্টিফিকেইট রেডি করে দিয়ে দিল! আল্লাহর তরফ থেকে এটা আমার জন্য একটা উপহার ছিলো, সকল প্রশংসা তার জন্য।
কৃতজ্ঞতা
সাথে কিছু মানুষের কাছে আমি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ আমার এই ইচ্ছাকে বাস্তবায়িত করতে সাহায্য করার জন্য। শুরু থেকে বলতে গেলে আমার জামাই এবং আমার ননাশ, ওনাদের সহায়তা না থাকলে হয়তো এটা শুরুই হতোনা। তারপর Matritto – মাতৃত্ব এবং মাতৃত্বের Inu আপু, Afifa আপু, নেজাম ভাইয়া, Nabia আপুর অনেক অনেক অবদান আছে আমার আজকের এই সাফল্যের পিছনে। আমার বড় বোন আমাকে প্রথম আমানি বার্থ বইটা পাঠিয়েছিল এবং আমার কোর্স মেইটদের অনেক অনেক ধন্যবাদ একে অপরকে সহায়তা করার জন্য। আমার উপর ভরসা করে যারা আমার কাছ থেকে গর্ভকালীন শিক্ষা নিয়েছেন এবং দৌলা সেবা নিয়েছেন তাদেরও অনেক অনেক ধন্যবাদ। এবং বাকি সবাইকে ধন্যবাদ যারা আমাকে দোয়া দিয়ে পাশে ছিলেন। এই যাত্রাটা যেন আল্লাহর তরফ থেকে আমার জন্য উপহার ছিলো। অনেকেই আমার উপর ভরসা করেন নি। তার বদলে অনেক অনেক মানুষ আমার উপর ভরসা করেছে এবং সাহায্য করেছে। আল্লাহই সব সহজ করে দিয়েছেন সর্বাবস্থায় আলহামদুলিল্লাহ। আমাকে দুয়ায় রাখবেন যেন আরও অনেক শিখতে পারি এবং শেখাতে পারি। বাংলাদেশের ম্যাটার্নিটি সিস্টেমে অনেক পরিবর্তন প্রয়োজন।
আমার অন্যান্য লেখা পড়তে পারেন এই লিংকে।
You must be logged in to post a comment.