গর্ভাবস্থায় চুলের পরিবর্তন ও যত্ন নিয়ে মেয়েরা সর্বদাই খুব চিন্তিত থাকে। আপনাদের এই চিন্তাকে কিছুটা দূর করতে আশা করি এই লেখাটা কিছুটা সহায়ক হবে। সাধারণত মেয়েদের চুলের বৃদ্ধি হওয়ার একটা নির্দিষ্ট সময় থাকে। গর্ভাবস্থায় শরীরে এস্ট্রোজেন হরমোনের আধিক্য চুলের বৃদ্ধির সময়কালকে আরো বাড়িয়ে দেয়। যার ফলে চুল পড়া কমে এবং পুরু হয়। পাশাপাশি আরেকটা হরমোন এন্ড্রোজেনের প্রভাবে মুখের এবং শরীরের লোমও দ্রুত বৃদ্ধি পায়।

গর্ভাবস্থায় চুলের পরিবর্তন ও যেভাবে যত্ন নেবেন

গর্ভাবস্থায় কি চুল আরো বেশি ঘন এবং পুরু হয়?

গর্ভাবস্থায় হরমোনের প্রভাবে চুলকে আরো ঘন ও পুরু লাগে। মনে হয় যেন চুলের বৃদ্ধির পরিমাণ আরও বেড়ে গেছে। আসলে আমাদের চুল স্বাভাবিকের তূলণায় বেশি বাড়েনা বা পুরু হয়না, বড়ং আমাদের স্বাভাবিক চুল পড়া কমে আসে।

সাধারণত মেয়েদের সর্বদা ৫% থেকে ১৫% চুল স্বাভাবিক ভাবে পরে (যখন আমরা চুল আচরাই বা শ্যাম্পু করি) এবং নতুন চুল উঠতে শুরু করে। বাকি ৮৫% থেকে ৯৫% চুল স্বাভাবিক নিয়মে বৃদ্ধি পেতে থাকে। 

জানেন কি? গড়ে মহিলাদের দিনে ১০০ টি চুল পরে 

গর্ভাবস্থায় এস্ট্রোজেন হরমোনের আধিক্য চুলের বৃদ্ধির সময়কালকে আরো বাড়িয়ে দেয়। যার ফলে চুল পড়া কমে এবং পুরু হয়। কারও কারও চুল আরও উজ্জ্বল হয়। এমনকি সোজা চুল কোঁকড়ানো বা কোঁকড়া চুল সোজাও হয়ে যায়।

কিন্তু প্রসব পরবর্তি চুল এমন থাকবে না। শিশু জন্ম দানের পরবর্তী সময়ে চুল পরা এবং বৃদ্ধির স্বাভাবিক গতিতে ফেরত যায়। তাই প্রসবের ১ থেকে ৬ মাসের মধ্যেই আপনি দেখতে পাবেন আপনার চুল পড়া অনেক বেড়ে গেছে। হঠাৎ করেই চুল বেশি পড়তে দেখে আমরা ঘাবড়ে যাই। কিন্তু এটাই স্বাভাবিক। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় চুল পড়ার ৩ থেকে ৬ মাসের মধ্যেই আবার সেসব স্থানে নতুন চুল গজাতে শুরু করে।

গর্ভাবস্থায় হরমোনের পরিবর্তনের ফলে মাথা এমনকি পুরো শরীরের চুল এবং লোম বেড়ে যায় এবং পুরু হয়ে যায়। কারও কারও যেখানে স্বাভাবিক সময়ে লোম বেশি থাকেনা যেমন মুখ, বুক, পেট, বাহু ইত্যাদি জায়গাতেও লোমের আধিক্য দেখতে পাওয়া যায়। তবে চিন্তার কারণ নেই। প্রসব পরবর্তি ৬ মাসের মধ্যে আবার আগের মতো স্বাভাবিক নিয়মে ফেরত আসে। 

যদিও কেউ কেউ এরকম বিশাল পরিবর্তনটা অনেক সময়ই গর্ভকালীন বা পরবর্তি সময়ে অনুভব করেনা। বিশেষ করে লম্বা চুলের অধিকারী মেয়েদের মধ্যে চুল পড়ার মাত্রা বেশি দেখতে পাওয়া যায়।

গর্ভাবস্থায় অবাঞ্ছিত লোম

এন্ড্রোজেন হরমোনের প্রভাবে মুখের এবং শরীরের লোমও দ্রুত বৃদ্ধি পায়। গর্ভাবস্থায় আপনি টুইজিং, ভ্যাক্সিং, শেভিং এর মাধ্যমে নিরাপদভাবে লোম উপড়াতে পারবেন। অনেকেই লেজার বা ইলেক্ট্রলাইসিস এর মাধ্যমে চিরতরে লোম উপড়ে ফেলাটা বেছে নেয়। এটি একটি নিরাপদ প্রক্রিয়া হলেও ব্যথামুক্ত নয়। গর্ভাবস্থায় স্বাভাবিকভাবেই ব্যথাকে যতটা এড়িয়ে চলা যায় সেই চেষ্টায় করে মায়েরা। তাছাড়া এটি পিগমেন্টেশন, কোলাজমা বা মাস্ক অফ প্রেগ্নেন্সিকে আরো বাড়িয়ে দিতে পারে। বিশেষ করে শ্যাম বর্ণের অধিকারীদের মধ্যে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। তবে ভালো খবর হলো প্রসবের ৩ থেকে ৬ মাসের মধ্যেই এসব লোম কমে আসে আগের অবস্থায়।

গর্ভাবস্থায় চুলের যত্ন নিতে কি কি করা যায়?

১। তেল দিয়ে ভালোভাবে মাসাজ করতে পারেন নিয়মিত। বিভিন্য তেল দিয়ে মাসাজ আপনাকে একটা ভালো অনুভুতি দিবে।

২। মাইল্ড শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার ব্যবহার করুন।

৩।হেয়ার কালার থেকে বিরত থাকুন

৪। ভেজা চুল আঁচড়াবেন না

৫। নিয়মিত চুলের আগা ছাঁটুন। সাধারণত ৩ মাস পরপর চুলের আগা ছাটার কথা বলা হয়ে থাকে। এতে চুলের বৃদ্ধি দ্রুত হয়। নিয়ম করে চুলের আগা ছাটুন।

৬। পুষ্টিকর খাবার খান

পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন এবং সুষম খাদ্য গ্রহন, পর্যাপ্ত পানি পান মাকে এই সময়ে সুস্থ সুন্দর থাকতে সাহায্য করে। গর্ভাবস্থায় শরীরে প্রোটিন-এর প্রয়োজন বেড়ে যায়। দৈনিক ৮০-১০০ গ্রাম প্রোটিন গ্রহণ না করলে তবে এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে আপনার চুলের উপর। সঠিক খাদ্য এবং ভিটামিন গ্রহণ আপনার হরমোনাল পরিবর্তন হবার পরেও আপনার চুলকে রাখবে ঘন, লম্বা আর ঝলমলে ইন সা আল্লাহ। নতুন কোন হেয়ার স্টাইলও ট্রাই করতে পারেন। এতে আপনার মধ্যে নতুন একটা লুক আসবে। আপনি ভালো বোধ করবেন।

পুনশ্চঃ মাতৃত্ব নিয়ে এসেছে হবু বাবা মা এবং সাপোর্ট পারসনদের জন্য প্রীনাটাল কোর্স। বিস্তারিত এখানে https://matritto.com/prenatal-class-in-bangladesh/

তথ্যসূত্র

১। ACOG. Undated. Skin Conditions during pregnancy. [Accessed September 2020]

২। বেবিসেন্টার

লেখাটি কি আপনার উপকারে এসেছে?
হ্যানা