বাচ্চাকে কতটুকু ফর্মুলা দুধ খাওয়াতে হয়, তাকে নির্দিষ্ট মাপের ফ্রেমে আবদ্ধ করা আসলে কঠিন। কারণ বেশ কিছু বিষয় এর সঙ্গে জড়িত:
- বাচ্চার বয়স
- বাচ্চার ওজন
- বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানো হয় কি-না
- বাচ্চা শক্ত খাবার খায় কি-না ইত্যাদি।
কীভাবে বুঝবেন বাচ্চার ক্ষুধা লেগেছে?
বাচ্চার খাবারের চাহিদা প্রতিদিন-প্রতিমাসে বদলায়। তাই বাচ্চাকে তার খাবারের পরিমাণ ও চাহিদা ঠিক করতে দিতে হবে। মানে হলো, বাচ্চা তার চাহিদা মতো খাবে এবং আপনি খেয়াল রাখবেন তার খিদে লেগেছে কি না।
বাচ্চার যখন খিদে লাগবে তখন সে মাথা ঘুরিয়ে আপনার দিকে তাকাবে বা আপনার বুকের দিকে মুখ নিয়ে আসতে চাইবে। সে হয়তো চুষে খাওয়ার কোন ভঙ্গি করবে বা তার হাত মুখে দিতে চাইবে। এসব লক্ষণ দেখে আপনি বুঝতে পারবেন বাচ্চার খিদে লেগেছে।
বাচ্চার মাঝে এ ধরনের চিহ্নগুলো দেখার সঙ্গে সঙ্গে দুধ ভর্তি বোতল দিন অথবা বুকের দুধ খাওয়ান। যদি বাচ্চার কান্নার জন্য অপেক্ষা করেন, তবে হয়তো সে মন খারাপ করে নাও খেতে পারে। তাই বাচ্চার খিদের চিহ্নগুলো দেখে সঙ্গে সঙ্গে খাবার দিন, এর মাধ্যমে বাচ্চাকে খাওয়ানোর কাজ অনেকটা সহজ হয়ে যায়।
খাওয়ানোর সময় তার দিকে খেয়াল রাখুন, পেট ভরে গেলে বাচ্চাদের আচরণ দেখে আপনি বুঝতে পারবেন। এছাড়াও খাবারের মাঝে সামান্য বিরতি দিন, যাতে বাচ্চা বুঝতে পারে তার আর খাওয়ার দরকার আছে কি না।
বাচ্চাকে দৈনিক কতটুকু ফর্মুলা দুধ দিতে হয়?
বাচ্চা যদি এখনো শক্ত খাবার না খায়, তবে নিচের সূত্রটা ব্যবহার করতে পারেন।
’প্রতিদিন বাচ্চার প্রতি কেজি ওজনের জন্য ১৫০ মিলি লিটার থেকে ২০০ মিলি লিটার পর্যন্ত র্ফমুলা দুধ দিতে পারেন’
সে হিসেবে বাচ্চার ওজন ৩ কেজি হলে তাকে ৪৫০ মি.লি. থেকে ৬০০ মি.লি. পর্যন্ত ফর্মুলা দিতে পারেন। এই পরিমাপ সব বাচ্চার জন্য সমান হবে না, তা বলা বাহুল্য। বরং আপনি একে শুরু করার জন্য একটি মাত্রা হিসেবে নিয়ে দেখুন বাচ্চার চাহিদা কেমন এবং সে অনুযায়ী এতে সমন্বয় সাধন করে নিন।
মনে রাখতে হবে, জন্মের প্রথম দিকে বাচ্চার পেট ছোট থাকে, তাই এ সময় সে স্বাভাবিকভাবেই কম খেতে চাইবে। এছাড়াও বাচ্চাকে খাবারের ক্ষেত্রে জোরজবরদস্তি না করা খুব জরুরী। এমনকি এ পরিমাপের খাবারের অতি অল্প থেকে গেলেও তা খেতে বাচ্চাকে বাধ্য করা মোটেই উচিত না। তাছাড়াও বাচ্চাকে যদি ডাক্তার বিশেষ কোন ফর্মুলা দিয়ে থাকেন, তবে তা খাওয়ানোর পরিমাণ সর্ম্পকে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলুন।
বাচ্চা বড় হওয়ার সঙ্গে কি খাবারের পরিমাণও বদলে যায়?
বাচ্চার খাবারের পরিমাণ শুধু তার ওজনের সঙ্গে না, বরং বয়সের সাথেও সম্পর্কিত। এখানে আমরা মাসভিত্তিক খাবারের পরিমাণের একটি তালিকা দিচ্ছি যেটা ভিত্তি হিসেবে ধরে প্রয়োজনমত সমন্বয় করে নেয়া যাবে:
জন্মের প্রথম কয়েক সপ্তাহে বাচ্চাকে প্রতিবারে ৬০ থেকে ৭০ মি.লি. ফর্মুলা দিন। এর বেশি দিলে বাচ্চা তা হজম করতে পারবে না।
২য় সপ্তাহ থেকে ২ মাস পর্যন্ত বাচ্চাকে প্রতিবারে ৭৫ থেকে ১০৫ মি.লি. পর্যন্ত খাবার দিন। সম্ভবত প্রতিদিন সে ৪৫০ থেকে ৭৩৫ মি.লি. পর্যন্ত খেতে পারবে। যদি বাচ্চার খিদে থেকে থাকে, তবে সে খাবার তাড়াতাড়ি শেষ করে আশেপাশে তাকাবে।
২য় মাস থেকে ৬ মাস পর্যন্ত বাচ্চা প্রতিবারে ১০৫ থেকে ২১০ মি.লি. পর্যন্ত প্রতিবারে খেতে পারবে।
বাচ্চার বয়স ৬ মাস হবার পর সে প্রতিবারে ২১০ থেকে ২৪০ মি.লি. পর্যন্ত খেতে পারবে। প্রতিদিন সে হয়তো ৯০০ মি.লি পর্যন্ত খেতে পারে।
এসময় বাচ্চাকে শক্ত খাবার দেয়া শুরু করার পর তার ফর্মুলার চাহিদা কমতে কমতে ৬০০ মি.লি. এ নেমে আসবে।
শক্ত খাবার দেয়ার পর বাচ্চা এত অভ্যস্ত হতে হতে দুধ কম খেতে চাইবে। এতে চিন্তিত হবার কিছু নেই। বরং এসময় আপনি বাচ্চাকে বিভিন্ন দুধ জাতীয় খাবার যেমন কাস্টার্ড, দই, চালের পুডিং এসব দিতে পারেন।
বাচ্চার বয়স ১ বছর হবার পর আপনি ফর্মুলা থেকে পূর্ণ ননিযুক্ত গরুর দুধ দেয়া শুরু করতে পারেন।
মাসভিত্তিক এই চার্ট একটা সাধারণ হিসেবমাত্র। আপনার বাচ্চার চাহিদার সঙ্গে মিলিয়ে এই তালিকায় প্রয়োজনীয় সমন্বয় করে নিন। আপনি যদি বাচ্চার চাহিদা বুঝতে না পারেন বা কোন সন্দেহে থাকেন, তবে ডাক্তারের পরার্মশ নিন।
বাচ্চাকে কখন ফর্মুলা দেয়া বন্ধ করতে হয়?
সাধারণত বাচ্চাকে ৬ মাসের সময় শক্ত খাবার দেয়া শুরু করতে হয়। এ সময় শুরুতেই সে সব ধরণের খাবার খাবে না। তাই এ সময় ফর্মুলা চালিয়ে যাওয়া জরুরী, কারণ এতে সে প্রয়োজনীয় সব পুষ্টিগুন পাবে। বাচ্চার বয়স ১ বছর হলে সে বিভিন্ন ধরনের খাবারে অভ্যস্ত হয়ে যাবে, ফলে তখন ফর্মুলা বন্ধ করে দেওয়া যাবে। এছাড়াও বাচ্চা ৬ মাসের সময় দৈনিক ৫০০ মিলির কম ফর্মুলা খেলে তাকে ডাক্তারের পরার্মশে ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট দেওয়া যেতে পারে।
লেখাটি রিভিউ করেছেন –
ডাঃ সাবেরা সাঈদা খান
M.B.B.S (DU), MPH (Reproductive & Child Health)(NIPSOM),
Diploma in Ultrasonogram
Lecturer, Ibn Sina Medical College
Consultant Sonologist, Trust Medical Care