গর্ভধারণের নবম সপ্তাহ

নবম সপ্তাহে এসে মা এবং বাচ্চার পরিবর্তনগুলো খুব দ্রুত হতে থাকে। এখনো মা’কে বাইরে থেকে দেখতে প্রেগন্যান্ট মনে না হলেও শরীরের ও মনের পরিবর্তনগুলো লক্ষ্যনীয়। ওজন উল্লেখযোগ্য না বাড়লেও কাপড় আঁটসাঁট মনে হতে পারে, বিশেষত কোমরের কাছে।

আপনার শরীরে যে পরিবর্তন আসবে

স্বাভাবিক সময়ে আকারে খুব ক্ষুদ্র জরায়ুটি বাড়ন্ত ভ্রুণের জায়গা দেয়ার জন্য দ্রুতই বাড়ছে। আপনার সন্তান এখন একটি সবুজ জলপাই এর সমান। এই বাড়তি বৃদ্ধির জন্য তলপেটে চাপ অনুভূত হতে পারে এবং খুব সহজেই ক্লান্তবোধ হতে পারে। শুধুমাত্র যে জরায়ুর বৃদ্ধি তা নয়, প্রেগন্যান্সি হরমোন অনেকাংশেই দায়ী এই ক্লান্তি বোধের জন্য।

অনেকের প্রথম দিকে ওজন কিছু কমলেও পরে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। মূলত এই সময়ের ওজন বৃদ্ধির মূল কারণ শরীরের জমা পানি। কারন ভ্রুণটি আকারে এতই ছোট যে এর জন্য মায়ের অতিরিক্ত ওজন বোধ হওয়ার কথা না। গর্ভধারনের অন্য সব লক্ষণ এর মধ্যে বোঝা যাবে, যেমন ক্লান্তিবোধ, খাবারে অনীহা অথবা আগ্রহ ইত্যাদি। অন্য সব কম বেশী সবার মধ্যে থাকলেও মুড সুইং খুবই সাধারণ ব্যাপার।

বাচ্চার ডেভেলপমেন্ট

ইতোমধ্যে বাচ্চার বাহ্যিক শারীরিক সব অঙ্গ- প্রতঙ্গের আকার চলে এসেছে, যেমন মাথা, হাত, পা। এদের মধ্যে মাথার আকার সবচেয়ে বড়। এর ওজন এক ইঞ্চি এবং ওজন প্রায় তিন গ্রামের মতন। এই সময় থেকেই মূলত বাচ্চার ওজন বাড়া শুরু হয়। প্রথম দিকে লেজের মতো অংশটি ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যাবে। অন্যান্য অঙ্গ প্রতঙ্গ ও মাংশপেশী কাজ করা শুরু করবে।

প্রজনন তন্ত্রের গঠন শুরু হয়ে গেলেও এই সময়ে তা বোঝা যাবে না। সাধারনত এটি জানার জন্য দ্বিতীয় ট্রাইমিস্টার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। ভ্রুনের কান, মুখ, নাক এগুলো পরিস্কার বোঝা যাবে, যদিও চোখ বন্ধই থাকবে। যমজ বাচ্চা হলে এই সময়ে করা আল্ট্রাসাউন্ডে বোঝা যাওয়ার কথা।

এই সপ্তাহে আপনার জন্য টিপস

  • অতিরিক্ত ক্লান্তিভাব এড়াতে যথাযথ বিশ্রাম নিন। অফিসে কিংবা বাসায় কাজের ফাঁকে একটু জিরিয়ে নিন।
  • স্তনের পরিবর্তন ও ভারীভাবের জন্য ম্যাটারনিটি ব্রা ব্যবহার করতে পারেন।
  • প্রচুর পানি খান। বাড়ীর বাইরে গেলে সাথে হালকা স্ন্যাক্স ও পানির বোতল রাখুন ব্যাগে।
  • গর্ভধারণজনিত দুঃশ্চিন্তা এড়াতে নিজে এইবিষয়ে পড়াশুনা করুন। সম্ভব হলে অন্য গর্ভবতী মা’দের সাথে যোগাযোগ রাখুন। মাতৃত্ব’র ফেসবুক গ্রুপ এরকম একটি জায়গা যেখানে আপনি মা হবার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন মহিলা বা সম্ভবা মা’দের সাথে ভাব বিনিময় করতে পারবেন। এধরনের অভিজ্ঞতা ও অনুভূতি বিনিময় মানসিক স্বাচ্ছন্দ্যের কারণ হতে পারে।
  • মুড সুইং এ যদি বেশী অসহায় বোধ করেন, ডাক্তারের সাহায্য নিন। তিনি হয়ত কাউন্সিলিং এর জন্য পাঠাবেন। মনে রাখবেন, মুড সুইং সম্পূর্ন স্বাভাবিক। অনেক সময় মানসিক কষ্ট পাওয়ার চাইতে বাইরের সাহায্য নেয়া ভালো
  • আপনার শারীরিক মানসিক সমস্যাগুলো স্বামীর সাথে শেয়ার করুন। খোলামেলা আলোচনা অনেকক্ষেত্রেই কার্যকর।
  • আপনি বাইরে কাজ করে থাকলে, কাজের ধরনের প্রতি খেয়াল রাখুন। খুব বেশী পরিশ্রম বা ফিল্ড ওয়ার্কের কাজ থাকলে সচেতন হউন। এছাড়া অনেক ফ্যাক্টরিতে বা বিউটি পারলারে (চুল ডাই) ক্যামিকেল নিয়ে কাজ হয়। এর কিছু কিছু ভ্রুণের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এ ধরনের কাজে নিয়োজিত থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। ঝুঁকিপূর্ণ হলে কর্মক্ষেত্রে জানান।
  • মানসিক অস্থিরতার জন্য মেডিটেশন বা ইয়োগা করতে পারেন। এছাড়া ধর্মীয় প্রার্থনা যেমন নামায মনোসংযোগে সাহায্য করে।

জটিলতা না থাকলে আপনার দৈনন্দিন কাজগুলো চালিয়ে যান। পড়াশুনা বা চাকরীরত থাকলে চালিয়ে যেতে পারেন। কাজে ব্যস্ত থাকলে অনেক সময় মানসিক চাপ/বিষন্নতা এড়াতে পারবেন।

গর্ভকালীন সময়ে আপনার বাচ্চার জন্য সবচেয়ে ভালো যে কাজটি আপনি করতে পারেন, তা হলো পুষ্টিকর খাবার খাওয়া। মাংশ ভালোমতো সেদ্ধ হয়েছে কিনা খেয়াল রাখবেন। কতিপয় সামুদ্রিক মাছ, যেমন শার্ক, ম্যাকারেল এড়িয়ে চলুন। চেষ্টা করুন একেবারে বেশী না খেয়ে, খাবারের পরিমানকে ছোট ছোট ভাগ করে বারবার খেতে। প্রতিদিনের খাবারে দুধ ও দুধজাতীয় খাবার অবশ্যই রাখুন। ফলিক এসিড সমৃদ্ধ প্রি-ন্যাটাল মাল্টিভিটামিন খেতে থাকুন।

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ মাম্মিসেন্টার ডট কম

লেখাটি রিভিউ করেছেন –

ডাঃ মাশরুরা মাহজাবিন
MBBS
General Practioner, Trained Mental health counselor

লেখাটি কি আপনার উপকারে এসেছে?
হ্যানা