ছোট সোনামনির দাঁতের যত্ন

দাঁতের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে, আমাদের বড়দের প্রতিদিনই দাঁতের যত্ন নিতে হয়, বছরে করতে হয় ডেন্টাল-চেক আপ। অনেকই দ্বিধান্বিত থাকেন বাচ্চাদের দাঁতের ব্যাপারে। কখন থেকে যত্ন নেয়া শুরু করব, কিভাবে যত্ন নিবো। অনেকে ভাবেন বেশী ছোট বাচ্চাদের দাঁতের ব্যাপারে এত যত্নবান হয়ে কি হবে, এই দুধ দাঁত তো একসময় পড়েই যাবে, তখন না হয় ভালো দাঁত গজাবে। এগুলো খুবই ভুল ধারনা। শুরু থেকেই যদি এই দুধ দাঁতগুলোর যত্ন না নেওয়া হয়, তাহলে পরে উঠা দাঁতের স্বাস্থ্যও ভালো থাকবে না।

দাঁত দেখা যাওয়ার সাথে সাথে শুরু করুন

এক এক বাচ্চার এক এক বয়সে দাঁত উঠে। অনেক বাচ্চাকে যেমন জন্মের সময় দুই/একটা দাঁত দিয়ে জন্মাতে শোনা যায়, তেমনি অনেকের বছর ঘুরে যায় দাঁত উঠতে কিংবা তারও বেশী। কিন্তু যখনই উঠুক, শুরু থেকেই নেওয়া চাই দাঁতের সঠিক যত্ন। ফিডার খাওয়া, এমনকি ব্রেষ্টফিডিং করা বাচ্চারাও একটু পর পর দুধ খায়, সেখান থেকে দাঁত গজানোর সাথে সাথে সহজেই শুরু হয় দাঁতের ক্ষয়। বিশেষ করে যেসব বাচ্চা রাতে উঠে দুধ খায়, দাঁতে লেগে থাকা দুধ বা খাবার থেকে ক্ষয় শুরু হয়। সেখান থেকে গামের ইনফেকশন, আর ইনফেকশন থেকে হতে পারে জেনজিভাইটিস, যা পরবর্তীতে পারমানেন্ট দাঁতের উপরও খারাপ প্রভাব ফেলে।

যেভাবে শুরু করবেন

বাচ্চাদের জন্য নরম ব্রেসল ওয়ালা কালারফুল টুথব্রাশ আর নানা ফ্লেভারের টুথপেষ্ট পাওয়া যায়, তাই কিনে দিন। এই পেষ্ট খেয়ে নিলেও কোন সমস্যা নেই। শূন্য মাস থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সী বাচ্চাদের টুথপেষ্ট পাওয়া যায়। দাঁত উঠার আগে এবং পরেও ছোট পরিস্কার পাতলা সুতি কাপড় অথবা গজ হাতের আঙ্গুলে পেঁচিয়ে বাচ্চার দাঁতের মাড়ি, জিভ পরিস্কার করে দিতে পারেন। ব্রাশ করার সময় সেসব জিনিস খেয়াল রাখবেন-

  • প্রতিদিন দুইবার ব্রাশ করার চেষ্টা করুন। অন্তত রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে মাষ্ট।
  • খুব অল্প পরিমান (ছোট চালের দানার সমান) এবং ফ্লোরাইড সমৃদ্ধ টুথপেষ্ট ব্যবহার করুন।
  • ধীরেসুস্থে যত্নের সাথে ব্রাশ করুন।
  • ব্রাশের ব্রেসল পুরোনো হয়েছে মনে হলেই বদলে ফেলুন।

ক্যাভিটি থেকে দূরে রাখুন

দাঁতের যত্ন নেয়ার পাশাপাশি, দাঁত যাতে সুরক্ষিত থাকে, সেদিকেও নজর দিতে হবে বাবা মায়ের। যে কোন খাবার, ফলের জুস, মিষ্টি এমনকি দুধও দাঁতের উপর লেয়ার তৈরী করে, দাঁতের ক্ষয় শুরু করতে পারে। এক বছরের আগে বাচ্চাদের খাবারে চিনি কিংবা মধু দেওয়া উচিত না। যেকোন সোডা, কোক-পেপসি, যে সব ড্রিংকসে অতিরিক্ত চিনি যোগ করা হয়- এগুলো থেকে বাচ্চাকে দূরে রাখুন। বাচ্চাকে শান্ত করার জন্য পেসিফায়ারে কখনোই চিনি বা মধু দিতে যাবেন না।

কখন ডেন্টিষ্টের কাছে নিতে হবে?

বাচ্চার দাঁত সুস্থ থাকলে, রেগুলার চেক-আপ শুরু করা যায় তিন বছর বয়স থেকে। এর আগে যে কোন সময়ে দাঁতে যে কোন ধরনের সমস্যা দেখা দিলে, অল্প সময়ের মধ্যে ডাক্তার দেখাতে হবে। ফ্যামিলিতে অন্য কারো, যেমন বাবা-মায়ের যদি ক্যাভিটির প্রবলেম থাকে অথবা মায়ের প্রেগন্যান্সিতে যদি দাঁতের কন্ডিশন ভালো না থাকে, তাহলে বাচ্চারও ক্যাভিটি হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।

বাচ্চার দাঁত ভালো রাখতে হলে যত্নের শুরুটা করতে হবে বাবা-মা কে আগ থেকেই। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস ও নিয়মিত ব্রাশ করার অভ্যাস গড়ে তোলা, একটু বড় হলে ফ্লস করতে শেখানো- এসব অভ্যাস যদি ছোট বয়স থেকেই করে দেয়া যায়, তাহলে বড় হওয়ার পর সে নিজেই নিজের দাঁতের যত্ন নিতে শিখে নেবে।

লেখাটি রিভিউ করেছেন –

ডাঃ সাবেরা সাঈদা খান
M.B.B.S (DU), MPH (Reproductive & Child Health)(NIPSOM),
Diploma in Ultrasonogram
Lecturer, Ibn Sina Medical College
Consultant Sonologist, Trust Medical Care

লেখাটি কি আপনার উপকারে এসেছে?
হ্যানা