
আমাদের মাঝে এখনো নবজাতকের নাভি নিয়ে অনেক ভুল ধারনা রয়েছে।
যেমন-
- নাভিতে সরিষার তেল লাগানো,ধারণা এতে তাড়াতাড়ি নাভি শুকিয়ে যাবে।
- নবজাতকের নাভি শুকানোর জন্য অঞ্চলভেদে অনেক প্রচলিত ব্যবস্থার আশ্রয় নেওয়া হয়। এগুলোর মধ্যে রসুনপোড়া ও গরম তেল।
কোথাও কোথাও নাভিতে লাগানো হয় সিঁদুর, মায়ের গলানো দুধ, কোনোখানে পাতাবাটা রস। পুরাকালে গোবর লাগানোর মতো ঘটনা ও আমাদের দেশে হতো, যদিও ইতিমধ্যেই অনেকেটা কমে এসেছে এসব। তবু নাভির যত্নে এ রকম বহু অপচিকিৎসার নজির এখনো মেলে।
এসব কুসংস্কার জনিত কাজের ফলে নবজাতকের নাভিতে সংক্রমণ ঘটেই, এমনকি গর্ভাবস্থায় মা ধনুষ্টংকার-প্রতিরোধী টিকা না নিয়ে থাকলে টিটেনাস বা সেপসিসের মতো অসুখে আক্রান্ত হয়ে শিশুর মৃত্যুও হতে পারে।
নাভির সঠিক যত্ন
নবজাতক ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর নাভি হচ্ছে শিশুতে ইনফেকশন হওয়ার প্রধান মাধ্যম। সে কারণে নবজাতকের নাভির সঠিক যত্ন এত বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক যত্ন নির্ভর করে পরিচ্ছন্ন প্রসব ও পরিচ্ছন্ন নাড়ি এ দুটোর ওপর।
বাসায় ডেলিভারির ক্ষেত্রে যা জরুরী
- প্রত্যেক প্রসবে ডেলিভারি কিট ব্যবহার করা।
- প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দাই বা ধাত্রীর হাত দুটো যেন সাবান ও পরিষ্কার পানিতে ভালোভাবে পরিচ্ছন্ন থাকে। প্রসূতির জরায়ুমুখও একইভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা চাই।
- শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার স্থান যেন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে।
- নাড়ি কাটার ব্লেড, সুতা, গজ যেন জীবাণুমুক্ত থাকে।
- প্রসব করানোর পর ধাত্রীর হাত দুটো ভালোভাবে সাবানপানিতে ধুয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হাতে নাড়ি কাটতে হবে।
- নাড়ি কাটার পর তাতে কোনো ড্রেসিং,ব্যান্ডেজ বা অ্যান্টিসেপটিক-কিছুই লাগানোর প্রয়োজন নেই। নাড়ি শুকনো রাখুন।পরিষ্কার ও খোলা থাক।
- নবজাতক শিশুকে জীবাণুমুক্ত পোশাক পরানো হোক। কদিনের মধ্যে নাড়ি আপনা-আপনি শুকিয়ে যাবে।
- সম্ভব হলে হাসপাতালে নরমাল ভ্যাজাইনাল ডেলিভারি করা সবচেয়ে নিরাপদ, বাসায় ধাত্রি দিয়ে করানো কে নিরুৎসাহিত করব।
নাভির সংক্রমণ কীভাবে বুঝবেন?
যদি নাভি থেকে পুঁজ বেরোয়, যদি নাভির চারপাশের অংশ লাল হয়ে যায়, তবে তা নাভির সংক্রমণ বলে বিবেচনা করা হয়।
এছাড়াও আরো যেসব বিষয় খেয়াল করতে হবে:
- নবজাতককে যদি নিস্তেজ দেখায়,
- সে দুধ চুষে খাওয়া বন্ধ করে দেয়,
- সঠিকভাবে না তাকায়,জেগে উঠছে না বা শ্বাস-প্রশ্বাসে অসুবিধা হচ্ছে, তাহলে মনে করতে হবে এ হলো নবজাতকের গুরুতর ইনফেকশন।
অবশ্যই উপরের লক্ষণগুলো দেখা মাত্র একজন শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এর পরামর্শ নিতে হবে।
নিজে কুসংস্কার থেকে বেড়িয়ে আসতে হবে এবং অন্যকে ও সচেতন করতে হবে।
[বিঃদ্রঃ বাংলাদেশের মানুষের জন্য এই লেখা,অযথা কোন প্রবাসী বাঙ্গালী পশ্চিমা দেশ গুলোর সাথে তুলনা করবেন না]
ডা.মেহেদি হাসান
এমবিবিএস,এমএস(শিশু সার্জারী)
শিশু ও নবজাতক বিশেষজ্ঞ সার্জন।
প্রাক্তন অনারারি মেডিকেল অফিসার,ঢাকা শিশু হাসপাতাল।
You must be logged in to post a comment.