প্রেগন্যান্সী লম্বা একটা যাত্রা, যার শেষ হয় লেবার বা প্রসবের মাধ্যমে শিশুর জন্ম দিয়ে। শেষের সপ্তাহগুলোতে এসে মায়েরা লেবার পেইন শুরুর প্রতীক্ষায় থাকেন। লেবার পেইন প্রাকৃতিকভাবে শুরু করতে মায়েদের কোন কিছু করণীয় আছে কি না তা তারা জানার চেষ্টা করেন।

বর্তমানে লেবার পেইন তোলার কৃত্রিম পদ্ধতি আছে। কিন্তু এটাও মাথায় রাখতে হবে, একটা অপ্রয়োজনীয় মেডিক্যাল হস্তক্ষেপ আরও একাধিক হস্তক্ষেপের সূত্রপাত ঘটায়। প্রসব যতদূর সম্ভব প্রাকৃতিক রাখাই শ্রেয়। তাই প্রাকৃতিকভাবে লেবার পেইন শুরু একজন মায়ের লক্ষ্যবস্তু হওয়া উচিত।

যেহেতু প্রত্যেকের শরীর আলাদা, সবার জন্য লেবার পেইন একই সময়ে শুরু হবে, এমন নয়। প্রেগন্যান্সী শেষের একটা নির্ধারিত সময় আছে, যেটা এক একজন মায়ের ক্ষেত্রে এক একরকম হতে পারে। ঝুঁকিমুক্ত প্রেগন্যান্সীতে ৩৯ সপ্তাহ থেকে মায়েরা লেবার পেইন প্রাকৃতিক উপায়ে শুরুর জন্য প্রস্তুতি নিতে পারেন।

এই সময়ে মায়ের শরীর ধীরে ধীরে লেবারের জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকে। অনেকের ক্ষেত্রে তলপেট শক্ত শক্ত হয়ে ব্রাক্সটন হিক্স ঘনঘন হতে থাকে, ব্যাকপেইন সহ নানান রকম অস্বস্তি থাকতে পারে। প্রাকৃতিকভাবে লেবার পেইন শুরু করার জন্য একজন মা নিজের মতো চেষ্টা করতে পারেন, কিন্তু মাথায় রাখতে হবে, সবকিছু যে কাজে দিবে, তা নাও হতে পারে। তবে মেডিক্যাল হস্তক্ষেপ এড়াতে নিজস্ব কিছু চেষ্টা অবশ্যই থাকা উচিত।

ব্যায়াম

সুস্থ প্রেগন্যান্সীর অংশ হিসেবে গর্ভাবস্থার শুরু থেকেই প্রতিদিন কিছু ব্যায়ামে অভ্যস্ত হওয়া উচিত। বিশেষ করে শেষের দিকে এসে ডেলিভারি পেইন প্রাকৃতিকভাবে শুরু করতে চাওয়ার উপায় হিসেবে ব্যায়াম করা আবশ্যক।

কম ঝুঁকির প্রেগন্যান্ট মায়েদের এই সময় প্রতিদিন ২০-৩০ মিনিট করে হাঁটা উচিত। হাঁটা পেলভিসের ইনলেটকে খুলে দেয়। মানসিক চাপ মুক্ত থাকতে হাঁটা চমৎকার একটা ব্যায়াম।

এছাড়া মায়েরা অন্য সেসব ব্যায়াম করতে পারেনঃ

  • স্কোয়াট
  • পেলভিক টিল্ট,
  • পেলভিক রক,
  • বার্থ বলে বসা,
  • বাটারফ্লাই পজিশন ইত্যাদি।

বেশকিছু ইয়োগা পোজ আছে, যেগুলো প্রাকৃতিক উপায়ে লেবার পেইন উঠাতে সাহায্য করে।

সহবাস বা ফিজিক্যাল ইন্টিমেসি

সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্স বা সহবাস প্রাকৃতিক লেবার পেইন তুলতে অনেক ক্ষেত্রে নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। অনেক ক্ষেত্রে তা মানসিক চাপমুক্ত হতে (stress release) সাহায্য করে। যৌনক্রিয়া অনেক সময় অক্সিটোসিন হরমোন নিঃসরণ করে, যা লেবার পেইন তোলার জন্য প্রয়োজন।

তাছাড়া ছেলেদের স্পার্মে প্রোষ্টাগ্লান্ডিন হরমোন থাকে, যা সার্ভিক্স নরম হতে সহায়ক। এসময় যেহেতু শরীর লেবারের জন্য প্রস্তুত, এগুলা অনেক সময় সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তবে লক্ষ্যনীয়ঃ মায়ের শরীর যদি লেবারের জন্য প্রস্তুত না হয়, তবে এগুলো কাজে আসবে না। যে কারনে অন্য কোন সময় সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্সে গর্ভপাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।

খেজুর

সমস্ত প্রেগন্যান্সী জুড়ে শক্তিবর্ধক খাবার হিসেবে খেজুরের ভূমিকা অতুলনীয়। বিশেষ করে প্রেগন্যান্সীর শেষভাগে এসে খেজুর খাওয়া জরায়ু মুখ নরম করতে ও খুলতে খেজুর ভূমিকা রাখে বলে একাধিক গবেষণা আছে। কাজেই প্রেগন্যান্সীর শেষের সপ্তাহগুলোতে রেগুলার ডায়েটে খেজুর রাখা উচিত।

খাবার

কিছু খাবার প্রাকৃতিকভাবে প্রসব ব্যাথা শুরু করতে নিয়ামক বলে প্রচলিত আছে। মশলাদার খাবার পরিপাকতন্ত্রে প্রতিক্রিয়া ঘটিয়ে জরায়ুতে কন্ট্রাকশন শুরু করতে পারে। যদিও এমন কোন ধরাবাঁধা প্রমাণ নেই, তারপরও অনেক মায়েরা মশলাদার খাবার খেয়ে দেখেন প্রসব বেদনা শুরু করতে।

আনারসে অবস্থিত ব্রোমেলিন এনজাইম জরায়ু মুখকে নরম করে প্রসব বেদনা শুরু করতে পারে বলে প্রচলিত আছে। তবে অধিক পরিমাণে খাওয়া হলে তা থেকে হার্টবার্ন এমনকি ডায়রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

ইভিনিং প্রিমরোজ ওয়েল সার্ভিক্সকে নরম ও ডাইলেট করে ব্যাথা শুরু করতে পারে। লাল রাস্পবেরীর পাতার চা, দারুচিনি পাতার চা, রোজমেরী পাতার চা, কালো কোহশ নামক হার্বস অনেকে খান। তবে যাদের প্লাসেন্টা প্রিভিয়া আছে, তারা যে কোন হার্বাল পাতা ব্যবহারে সাবধান থাকবেন।

ক্যাস্টর ওয়েল

স্বল্প পরিমাণে (১-২ আউন্স) ক্যাস্টর ওয়েল প্রোষ্টাগ্লান্ডিন নিঃসরণ করে, যা জরায়ুমুখ নরম করে লেবার শুরু করতে পারে। তবে তা অভিজ্ঞ ডাক্তার বা মিডওয়াইফের তত্ত্বাবধানে হওয়া উচিত। পরিমাণে অধিক হলে ডায়রিয়া শুরু হতে পারে।

নিপল স্টিমুলেশন

নিপল স্টিমুলেশন জরায়ুর সংকোচন করে কন্ট্রাকশনের সূত্রপাত ঘটাতে পারে। মূলত নিপল স্টিমুলেশন অক্সিটোসিন নামক লাভ হরমোনের নিঃসরণ ঘটায়, যা লেবার পেইন শুরুতে সাহায্য করে। একই ভাবে মা যখন সন্তানকে ব্রেস্টফিড করান, তখনও আক্সিটোসিন হরমোন সাহায্য করে জরায়ুর সংকোচন ঘটিয়ে তাকে আগের অবস্থানে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে এবং প্রসব পরবর্তি রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে।

আকুপাংচার এবং আকুপ্রেশার

শরীরের কিছু নির্দিষ্ট আকুপাংচার এবং আকুপ্রেশার সার্ভিক্স রাইপ করে বলে কিছু দেশে বহুল প্রচরিত রয়েছে। আকুপ্রেশারে এরকম কাজে দিক বা না দিক, কিছু পয়েন্টে এরকম ম্যাসাজ মাকে রিল্যাক্স করে, প্রেগন্যান্সীর শেষের দিকের নানান রকম ব্যাথায় আরাম দেয়।

যদিও ৩৮ সপ্তাহ বা এর পর থেকে প্রাকৃতিক লেবার পেইন শুরুর জন্য চেষ্টা করা উচিত, তবে এটাও মাথায় রাখা উচিত, যত বেশি সময় ধরে শিশু মায়ের পেটে থাকবে, তত বেশি সে পরিণত (Mature) হবে। ফুল টার্ম প্রেগন্যান্সী মানে শিশুর মস্তিষ্ক বিকশিত (Brain development) হবার সুযোগ পাচ্ছে বেশি, মাংসপেশির উন্নতি হচ্ছে।

প্রাকৃতিকভাবে লেবার পেইন শুরুর যে কোন উপায় চেষ্টা করার আগে এর সুবিধা, অসুবিধাগুলো ভালোভাবে জেনে নিন। যে কোন ধরনের জিজ্ঞাসা থাকলে আপনার ডাক্তার বা মিডওয়াইফের সাথে কথা বলে পরিষ্কার হয়ে নিন। আপনি নিজের মতো করে চেষ্টা করতে পারেন, কিন্তু মনে রাখবেন, লেবার পেইন শুরুর সময় সবার জন্য এক রকম না। আপনার জন্য যখন সময়, তখনই প্রাকৃতিক ভাবে লেবার পেইন শুরু হবে। কাজেই মানসিক চাপ মুক্ত থাকার চেষ্টা করুন।

তথ্যসূত্র

  • ওয়েব এম ডি ডট কম।
  • হেলথ লাইন ডট কম।

লেখাটি কি আপনার উপকারে এসেছে?
হ্যানা