জ্বরাক্রান্ত বাচ্চা যখন কাঁদতে থাকে এবং জ্বরের তাপমাত্রা বাড়তে থাকে, তখন সহজেই দুঃশ্চিন্তা হতে পারে। তবে ভালো খবর হলো, বেশিরভাগ জ্বর নিয়ে চিন্তিত হবার কিছু নেই। কারণ জ্বর হলো যেকোন অসুখের বিরুদ্ধে বাচ্চার প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ব্যবস্থার অংশ।
তবে বাচ্চার বয়স ৬ মাসের কম হলে জ্বর নিয়ে চিন্তিত হবার কারণ আছে। এই বয়সের বাচ্চাদের জ্বর হওয়াটা স্বাভাবিক না, তাই আপনার জ্বরাক্রান্ত বাচ্চার বয়স ৬ মাসের কম হলে সতর্ক দৃষ্টি রাখুন।
নিচের অবস্থাগুলোতে বাচ্চাকে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তার দেখাবেন-
- বাচ্চার বয় ৩ মাসের কম ও তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রি বা ৩৮ সেলসিয়াসের বেশি
- বাচ্চার বয় ৬ মাসের কম এবং তাপমাত্রা ১০২ ডিগ্রি বা ৩৯ সেলসিয়াসের বেশি
৬ মাসের বেশি বয়সি বাচ্চাদের ক্ষেত্রে অবশ্য এরকম ধরাবাধা কোন তাপ মাত্রা নেই যা দেখে বলা যাবে বাচ্চার অবস্থা কতটা খারাপ। এক্ষেত্রে বাচ্চার সামগ্রিক শারীরিক অবস্থার দিকে খেয়াল রাখুন।
বাচ্চাদের জ্বর কখন হয়?
সবচেয়ে সাধারণ কারণগুলো এরকম-
1. ঠান্ডা
2. ফ্লু বা ভাইরাস জনিত ঠান্ডা
3. গলা ব্যাথা
4. কানের সংক্রমন
5. প্রস্রাবের রাস্তায় সংক্রমন
6. শ্বাসনালীর অসুখ যেমন নিউমোনিয়া, শ্বাসনালীর প্রদাহ/ব্রঙ্কাইটিস
7. ভাইরাসঘটিত র্যাশ যেমন চিকেনপক্স, রোজিওলা
এছাড়া টিকা দেয়ার পর বাচ্চাদের সাধারণত জ্বর আসে। এসব ক্ষেত্রে ডাক্তার বা টিকাদানকারী স্বাস্থ্যকর্মী টিকা দেয়ার সময় প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
বাচ্চার জ্বর কিভাবে মাপতে হয়?
জ্বরাক্রান্ত বাচ্চাকে স্পর্শ করার মাধ্যমে আপনি বলে দিতে পারবেন সে অসুস্থ কি না। এছাড়া আপনি থার্মোমিটার ব্যবহার করতে পারেন, কারণ এরমাধ্যমে আপনি অসুস্থতার সঠিক মাত্রা বুঝতে পারবেন।
আমাদের শরীরের সাধারণ তাপমাত্রা ৯৬ থেকে ৯৮ ডিগ্রি ফারেনহাইটের মাঝে থাকে। সেলসিয়াসের হিসাবে এটা ৩৬ থেকে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো। তবে বাচ্চাদের ক্ষেত্রে কতটুকু স্বাভাবিক তা একটু কমবেশি হতে পারে। জ্বর হলো বাচ্চার স্বাভাবিক তাপমাত্রার চেয়ে বেশি তাপ।
থার্মোমিটারের ধরণ:
এনালগ থার্মোমিটার: আমরা এধরনের থার্মোমিটারের সাথে বেশি পরিচিত। সাধারণত এটা বগল বা জিভের নিচে দিয়ে ১ মিনিট ধরে রেখে তাপমাত্রা বুঝতে হয়। সঠিকতার মাপকাঠিতে এগুলো ডিজিটাল থার্মোমিটারের চেয়ে পিছিয়ে আছে। সাধারণত আপনার আশেপাশের ফার্মেসিগুলোতে এটা পাওয়া যায়।
ডিজিটাল থার্মোমিটার:
সম্ভবত বাসায় ব্যবহারের জন্য এগুলো সবচেয়ে ভাল থার্মোমিটার। সঠিকতার মাপকাঠিতে এ ধরনের থার্মোমিটার অধিক নির্ভরযোগ্য। ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত হলে এগুলো বিপ শব্দ করে। এরপর আপনি বাচ্চার বগলের নিচে দিয়ে তার হাত দিয়ে চেপে রাখুন।
কান-থার্মোমিটার:
সঠিক তাপমাত্রা মাপার জন্য এটা সবচেয়ে বেশি উপযুক্ত। তবে সমস্যা হলো, বাচ্চাদের তাপ মাপার জন্য এটা ব্যবহার করা বেশ কঠিন। এছাড়া এগুলোর দামও অনেক।
স্ট্রিপ-থার্মোমিটার:
এধরনের থার্মোমিটারগুলো ততটা নির্ভরযোগ্য না কারণ এগুলো শরীরের তাপ না মেপে ত্বকের তাপমাত্রা পরিমাপ করে। তাই মাতৃত্বের পাঠকদের এধরনের থার্মোমিটার ব্যবহার না করার পরামর্শ দেয়া গেল।
কীভাবে জ্বরাক্রান্ত বাচ্চার সেবা করবেন?
- সাধারণত জ্বরের চিকিৎসা বাসায়-ই করা সম্ভব। কয়েকটি সাধারণ উপায় নিচে দেয়া হলো-
বাচ্চাকে যথেষ্ট পরিমাণে পানি খেতে দিন। কোন অবস্থাতেই যেন সে পানি-শূন্যতায় না ভোগে। নিয়মিতভাবে বুকের দুধ/ফিডার দিন। সাথে ফুটানো পানি ঠান্ডা করে পান করতে দিন। - বাচ্চা শক্ত খাবার খেয়ে থাকলে তাকে তার পছন্দমতো খেতে দিন। একেবারে খেতে না চাইলে অল্প পরিমাণে খাওনোর চেষ্টা করুন, যাতে একেবারে বলশক্তি হারিয়ে না ফেলে।
- বাচ্চাকে চাইলে বিছানায় বিশ্রাম করতে দিন। আর হাটাহাটি করতে চাইলে তাকে তা-ই করতে দিন। সে কি চাইবে তা মূলত তার জ্বরজনিত ক্লান্তির মাত্রার উপর নির্ভর করবে।
- বাচ্চাকে এমনভাবে কাপড় পড়ান, যাতে সে আরাম পায়, এবং তার মাথা/মুখ খোলা রাখুন। তাকে কাপড় মুড়িয়ে রাখলে জ্বরের তাপে সে কষ্ট পেতে পারে, আবার সব কাপড় খুলে ফেললে শীতে কাপুনি ধরে যেতে পারে। এজন্য হালকা কাপড় পড়িয়ে একটা কাথা দিয়ে দিন। আরো পরামর্শের জন্য ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলুন।
- যদি বাচ্চা খুব ছটফট করে, কষ্ট পায়, তবে প্যারাসিটামল সিরাপ বা ইব্যুপ্রোফেন জাতীয় ঔষুধ দিন। যেসব বাচ্চার ৩৭ মাসের বেশি সময় মাতৃগর্ভে ছিল এবং ওজন ৪ কেজির বেশি তাদের জন্য এমন প্যারাসিটামল জাতীয় সিরাপ আছে যেগুলো বাচ্চাদের জন্য বিশেষভাবে প্রস্তুতকৃত।
- কোন ঔষুধ খাওয়াবেন এটা ঠিক করতে না পারলে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলুন। কখনোই দুই ধরণের ঔষুধ একসঙ্গে দিবেন না। ঔষুধের মাত্রা সাধারণত প্যাকেটের গায়ে লেখা থাকে। এটা অনুসরন করতে পারেন।
বাচ্চার জ্বর মারাত্মক কি না কিভাবে বুঝবেন?
বাচ্চার জ্বরের সঙ্গে যদি নিচের উপসর্গগুলো থাকে, তাহলে সে সম্ভবত এমন অসুখে আক্রান্ত যেটা ডাক্তারের পরামর্শ দাবি কারে। এগুলো হলো:
- বাচ্চা বেশ ঘুমঘুম বা নিদ্রালু বোধ করছে।
- বাচ্চা যদি ৮ ঘন্টারও বেশি সময় ধরে খেতে বা পান করতে না চায়। অথবা সে বিগত ২৪ ঘন্টায় নিয়মিত খাওয়া দুধের অর্ধেকেরও কম খাচ্ছে।
- বাচ্চার মাথায় নরম কোন জায়গা দেখা যাওয়া, ঠোট শুকনো হওয়া, কালো-হলুদাভ প্রস্রাব এবং অল্প পরিমাণে প্রস্রাব বা পায়খানা করা। এগুলো পানিশূন্যতা নির্দেশ করে।
- বাচ্চার গায়ে কোন কারণ ছাড়াই র্যাশ উঠা।
এধরনের ক্ষেত্রে ডাক্তার দেখানো শ্রেয়তর। বাচ্চার বয়স ৬মাসের কম হলে বেশ সতর্ক থাকা উচিত, কারণ অল্প বয়সী বাচ্চাদের জন্য জ্বর হওয়া অস্বাভাবিক।
[sc name=”post_footer”]