বুকের দুধের প্রবাহ বৃদ্ধির উপায়

সন্তান ঠিকমতো বুকের দুধ পাচ্ছে কি না এটা অনেক মা’দের দুশ্চিন্তার কারণ। এধরনের দুশ্চিন্তা অনেক ক্ষেত্রে যৌক্তিক, কারণ সন্তান জন্মের পরবর্তী দিনগুলোতে পর্যাপ্ত দুধ না অাসার অভিজ্ঞতা বেশিরভাগ মা’দের অাছে। সুখের বিষয় হলো, এটা সাময়িক। মায়ের বুকের দুধের উৎপাদন বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানোর সাথে সম্পর্কিত। যত বেশি বুকের দুধ খাওয়াবেন তত বেশি দুধ উৎপাদন হবে। কারণ মায়ের বুকের দুধ উৎপাদনের একমাত্র স্টিমুলাস হলো  শিশুর দুধ  টানা। অর্থাৎ শিশু যত দুধ টানবে, মায়ের মস্তিষ্কের পিটুইটারি গ্রন্থি তত উদ্দীপ্ত হয়ে বেশি বেশি প্রলেকটিন হরমোন তৈরি করবে। তত বেশি দুধ উৎপাদিত হবে। অন্যথায় বুকের দুধ উৎপাদন ধীরে ধীরে কমে যাবে এবং একসময় তা বন্ধ হয়ে যায়।

বুকের দুধ বাড়ানোর কিছু সহজ উপায়

প্রচুর পানি পান করুন

বুকের দুধ উৎপাদনে মায়ের শরীরে প্রচুর ক্যালোরি প্রয়োজন হয়। কিন্তু মা যদি পানিশূন্যতায় ভোগেন তবে পর্যাপ্ত দুধ উৎপাদন সম্ভব নয়। বুকের দুধ বাড়ানোর সবচেয়ে সহজ এবং কার্যকরী উপায় হলো, প্রচুর পরিমান পানি পান অথবা তরল জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করা এবং হাইড্রেটেড থাকা।প্রতিদিন আট থেকে বারো গ্লাস পানি পান করুন, যা বুকের দুধ বাড়িয়ে দিতে সাহায্য করে।

গরম দুধ এবং জিরা পান করুন

এক গ্লাস গরম দুধের সাথে এক চা চামচ জিরা গুঁড়ো মিশিয়ে নিন। এবার এটি প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে পান করুন। এটি বুকের দুধ বৃদ্ধি করার সাথে সাথে শরীরে আয়রনের ঘাটতি দূর করে থাকে। আপনি চাটনি অথবা ভর্তার সাথে জিরা গুঁড়া মিশিয়ে খেতে পারেন

খাদ্য অভ্যাস পরিবর্তন

প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় পরিবর্তন আনুন। সবুজ শাক সবজি, ডিম, দুধ, রসুন, আঙ্গুরের রস, ফলের রস, মুরগির মাংস প্রতিদিন খাওয়ার চেষ্টা করুন। এই খাবারগুলো বুকের দুধ বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে থাকে। চাটনি অথবা ভর্তার সাথে জিরা গুঁড়া মিশিয়ে খেতে পারেন।

রসুন ও গাজর

প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ৩ কোয়া রসুন খেতে পারেন। এটিও আপনার বুকের দুধ বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে। কাঁচা রসুন খেতে না পারলে এক কাপ পানিতে তিন কোয়া রসুন যোগ করুন এবং সিদ্ধ করুন। পানির পরিমান কমে আসলে তাতে এক চামচ মধু যোগ করতে পারেন। এটি প্রতিদিন খাবেন যা আপনার দুধ বাড়ানোর জন্য কার্যকরী। গাজর এর জুস বুকের দুধ বৃদ্ধিতে খুব উপকারী। আপনি সিদ্ধ বা কাঁচা গাজর সালাদ, স্যুপের সাথে খেতে পারেন।

পাশ পরিবর্তন

একটি স্তনের দুধ সম্পূর্ণ খাওয়া হয়ে গেলে তবে আরেকটি স্তনে দুধ খেতে দেবেন। খুব ঘন ঘন স্তন পরিবর্তন করবেন না। একটি স্তন অন্তত ১৫ মিনিট খাওয়াবেন। এতে উভয় স্তনে দুধ বৃদ্ধি পাবে।

পর্যাপ্ত বিশ্রাম

রাতে যতটুকু সম্ভব ঘুমিয়ে নিন, দিনে বাচ্চা ঘুমানোর পর কিছুক্ষন ঘুমিয়ে নিন। মা পর্যাপ্ত বিশ্রাম না পেলে শরীর দুর্বল হয়ে পরে এবং দুধ উৎপাদন কমে যায়।

ব্রেস্ট ম্যাসেজ

ব্রেস্ট ম্যাসেজ বুকের দুধ উৎপাদনের পরিমান বৃদ্ধি করে না। কিন্তু এটি স্তনের বদ্ধ নালী খুলতে এবং পিন্ডের ন্যায় ফোলা অংশ কমাতে সাহায্য করে যা দুধের পরিমান বাড়ায়। প্রতিদিন দুই থেকে তিন মিনিট আলতোভাবে স্তনের চারপাশে ম্যাসেজ করুন।

একজন শিশুর জন্য মায়ের বুকের দুধের কোনো বিকল্প নেই। একটি শিশুর শারীরিক অথবা মানসিকভাবে বেড়ে উঠার জন্য মায়ের বুকের দুধ শ্রেষ্ঠ খাবার।সচেতন হোন এবং আপনার শিশুকে সুন্দরভাবে বেড়ে উঠতে সাহায্য করুন।

লেখাটি রিভিউ করেছেন –

ডাঃ সাবেরা সাঈদা খান
M.B.B.S (DU), MPH (Reproductive & Child Health)(NIPSOM),
Diploma in Ultrasonogram
Lecturer, Ibn Sina Medical College
Consultant Sonologist, Trust Medical Care

লেখাটি কি আপনার উপকারে এসেছে?
হ্যানা