
সন্তান নিঃসন্দেহে আল্লাহ্র দেয়া এক নিয়ামত এবং এক বিশাল দায়িত্ব। বিয়ের পর বাবা-মা হওয়া যেমন নিতান্তই স্বাভাবিক, তেমনি বহু দম্পতি সন্তানধারণে নানা রকম সমস্যার সম্মুখীনও হয়ে থাকেন। বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসায় বেশ কিছু পদ্ধতি আছে তবে আমাদের দেশে এই সমস্যায় হিজামার প্রচলন তেমন শোনা যায় না যদিও এখন আমাদের দেশেই এই চিকিৎসা নেয়া সম্ভব। এ থেকে ভালো ফলও পাওয়া যাচ্ছে।
হিজামা কী?
হিজামা একটি সুন্নাহভিত্তিক চিকিৎসা এবং এর মাঝে বহু উপকারিতা আছে। আমাদের রক্ত চলাচল নিরবিচ্ছিন্ন করার সহায়ক একটা মাধ্যম এটা। আমাদের শরীরে দুই ধরণের রক্ত আছে, একটা হচ্ছে পরিষ্কার রক্ত যা আমাদের শরীরে পুষ্টি, অক্সিজেন ও আরও অনেক উপকারী উপাদান পাম্প করে আমাদের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে কার্যকর রাখতে সাহায্য করে। আরেক ধরণের রক্ত হচ্ছে বদ্ধ রক্ত যা প্রবাহিত হয় না এবং এটা বিষাক্ত। হিজামা বা কাপিং এই বদ্ধ রক্ত নিঃসরণে কাজ করে। এই পদ্ধতিতে শরীরের কিছু নির্দিষ্ট স্থানে ছোট ছোট ছেদন করে সেই স্থানে কাপের সাহায্য শরীর থেকে রক্ত নিঃসরণ করা হয়। যে রক্তটা আপনার শরীর থেকে বের হয়ে যায় তা দেখতে গাঢ়, ঘন কালচে রক্তের মতো যা স্পষ্টতই অস্বাস্থ্যকর। তাই এটা বের হয়ে যাওয়ার পর আপনি শারীরিকভাবে হালকা ও স্বাস্থ্যকর বোধ করবেন কারণ তখন শুধু পরিষ্কার রক্ত আপনার শরীরে প্রবাহিত হবে। দেখা যায় কিডনি এইসব অপ্রোজনীয় জিনিষগুলো ফিল্টার করে শরীর থেকে বের করে দিতে পারেনা যেটা হিজামার দ্বারা বের হয়ে যায় শরীর থেকে।
হিজামা ও গর্ভধারণ
বন্ধ্যাত্বের পেছনে অনেক কারণ থাকে। যেসব কারণে নারীরা এর স্বীকার হন তার বেশিরভাগই ফ্যালোপিয়ান টিউবের সাথে সম্পৃক্ত। এই টিউবের কাজ হচ্ছে ডিম্বাশয় থেকে জরায়ুতে ডিম বহন করে নিয়ে যাওয়া। যদি কোন কারণে এই টিউব বন্ধ থাকে বা এতে কোন পরিবর্তন ঘটে তাহলে ডিম জরায়ুতে যেতে পারেনা, ফলে গর্ভধারণ হয় না।
পুরুষের বন্ধ্যাত্বের পেছনেও অনেক কারণ থাকে, যার মাঝে আছে দুর্বল স্পার্ম/শুক্রাণু যা ভালো মতো ’সাঁতার’ কাটতে পারেনা কিংবা সমস্যা অণ্ডকোষে।
হিজামা করা হলে কোন বদ্ধ রক্ত থাকলে সেটা ও তার সাথে দূষিত পদার্থ শরীর থেকে বের হয়ে যায়। পুরো শরীরে বিশুদ্ধ রক্ত প্রবাহিত হতে পারে এবং শুক্রাণু ও ডিম্বাণু মিলিত হওয়ার সুযোগ পায়। স্ত্রী জননেন্দ্রিয়ে রক্ত প্রবাহ বাড়ে। ফলে শরীর যদি সঠিক পুষ্টি, ভিটামিন, মিনারেল পায় তাহলে শরীরের জন্য শুক্রাণু ও ডিম্বাণু উৎপাদন করা সহজ হয়। সুতরাং গর্ভাশয়ের পরিচর্যায় হিজামা অনেক উপকারী হতে পারে। পুরুষের বন্ধ্যাত্ব দূর করতেও হিজামা খুব উপকারী। এটা প্রোস্টেটের সমস্যা দূর করে এবং যৌণাঙ্গের সংক্রমণ সারায়।
আমরা আরও জানি যে, মানসিক উদ্বিগ্নতা গর্ভধারণের পথে বাধা সৃষ্টি করে। মানসিক চাপ, কষ্ট, উদ্বিগ্নতা, বিষন্নতা থেকে মুক্তি পেতে এবং উর্বরতার মাত্রা বাড়াতে হিজামা চিকিৎসার শরণাপন্ন হওয়া যায়। তাই বলা যায় হিজামা ও গর্ভধারণ ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত এবং হিজামা শরীরকে গর্ভধারণের জন্য উপযোগী হতে সাহায্য করে।
হিজামা ও গর্ভাবস্থা
গর্ভধারণে সাহায্য করলেও গর্ভাবস্থায় এটা চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয় না অনেক সময়। তবে গর্ভবতী নারীরা তাদের অন্য কোন শারীরিক সমস্যার চিকিৎসায় এর সাহায্য নিতে পারেন।
গর্ভধারণের উদ্দেশ্যে কখন হিজামা করানো হয়
হিজামা প্ল্যানেটের চিকিৎসকরা গর্ভধারণের উদ্দেশ্যে মাসিকের ২য় ও ৩য় দিনে হিজামা করান।
বন্ধ্যাত্ব দূর করতে হিজামা বিভিন্নভাবে সাহায্য করে। এটা থাইরয়েডের সমস্যা সারাতে পারে ও ফ্যালোপিয়ান টিউবের ব্লক দূর করতে পারে। লিউটেয়াল ফেজ-এ (Luteal phase) ত্রুটি থাকার কারণে গর্ভধারণে দেরী হতে পারে, হিজামা এটাও দূর করতে পারে। অনেকসময় অনিয়মিত মাসিকের কারণে বন্ধ্যাত্ব ঘটে। মাসিকের ব্যথা ও অনিয়মিত মাসিকের সমস্যা দূর করতেও হিজামা সাহায্য করতে পারে।
তথ্যসূত্র:
১। হিজামা প্ল্যানেট : কাপিং এন্ড রুক্যাইয়া সেন্টার
২। What is hijama?
৩। Can Hijama help with fertility?
৪। Hijama and pregnancy
লেখাটি রিভিউ করেছেন:
ডাঃ ইফফাত সাইফুল্লাহ
কন্সাল্টেন্ট হিজামা থেরাপী
হিজামা প্ল্যানেট : কাপিং এন্ড রুক্যাইয়া সেন্টার (চীফ বনানী ব্রাঞ্চ)
ডাঃ মোহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন(সাহেদ)
কন্সাল্টেন্ট হিজামা থেরাপী
হিজামা প্ল্যানেট : কাপিং এন্ড রুক্যাইয়া সেন্টার (চীফ চট্টগ্রাম ব্রাঞ্চ)
সম্পাদনায়: হাবিবা মুবাশ্বেরা
ছবি কৃতজ্ঞতা: Bay State Physical Therapy
You must be logged in to post a comment.