সিরিজ ইনডেক্স
১. হোমস্কুলিং এর ভালমন্দ
২. আমার হোমস্কুলিং এর আদ্যোপান্ত – প্রথম পর্ব
৩. হোমস্কুলিং ও ইসলাম শিক্ষা
৪. হোমস্কুলিং ও আউটডোর ট্রিপ
৫. হোমস্কুলিংঃ করণীয় ও বর্জণীয়
৬. হোমস্কুলিংঃ অক্ষর শেখানো
৭. হোমস্কুলিং কারিকুলাম যেভাবে তৈরি করবেন?

হোমস্কুলিং আউটডোর ট্রিপ

১. পার্ক

বিশুদ্ধ খোলা বাতাসে বুক ভরে শ্বাস নেয়াটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। পার্কে ৯০% সময় হবে নিছক প্রকৃতির মাঝে সময় কাটানো। তবে এর ফাঁকে ফাঁকে সবচেয়ে কমন গাছগুলো চেনা, পাখি চেনা, প্রজাপতি, ঘাসফুল ইত্যাদি চেনানো যেতে পারে। এর সাথে বলা যেতে পারে যে এগুলো কে বানিয়েছেন জানো? আল্লাহ বানিয়েছেন, আল্লাহ কী সুন্দর করে বানিয়েছেন দেখেছ? সুবহানাল্লাহ! ক্র‍্যাফট প্রিয় বাচ্চাদের জন্য একটা nature journal তৈরি  করা যায়। দুই বছর বয়সের বাচ্চা পার্কে তার যা যা ভালো লাগে(দুই একটা ঘাস, দুই চারটা ফুল, পাতা, পাথরের টুকরা) ওখানে লাগাবে। এরপর বাসায় এসে দেখুন ইন শা আল্লাহ নিজে নিজেই ওগুলো স্টাডি করবে বার বার। আপনিও শেখাবেন। এটা কী ফুল? কয়টা পাপড়ি গুনে ফেলি চলো(counting/Maths) কী রঙ ফুলটার? এটা কোন গাছের পাতা বলো তো? (3+ yrs) 

২.পরিষ্কার বাজার/সুপারশপ

বাচ্চাকে দিয়ে বেশিরভাগ কাজ করান। আপনি ট্রলি ঠেললে ওকে ইন্সট্রাক্ট করবেন, ও জিনিস তুলে তুলে রাখবে। মাঝে মাঝে ওকে বেছে নিতে দেবেন। যেমন আজকে কোন সবজিটা খেতে ইচ্ছা করছে? কাকরোল? আচ্ছা খুঁজে দেখ তো কাকরোল কোথায় আছে? এবার নিজে হাতে ট্রলিতে রাখো। কোন কোন জিনিস কেনার আগে ওর সাথে পরামর্শ করবেন। ওকে যতভাবে যত বেশি পারা যায় পার্টিসিপেট করাবেন। দাম মেটানোর পর ছোট্ট/হালকা একটা শপিং ব্যাগ ওকেও বহন করতে দেবেন। দামটা ওর হাত দিয়ে পরিশোধ করবেন।

৩. হাসপাতাল

তোমার কিছুদিন আগে জ্বর ছিল মনে আছে? কত কষ্ট ছিল! আল্লাহ তারপর ভালো করে দিলেন। 

অসুস্থ ব্যক্তিদের কষ্ট দেখবে, দুয়া করবে, স্বান্তনা দেবে। সম্ভব হলে দাওয়াতি কাজও করবে(আল্লাহকে বলেন আংকেল, আল্লাহ ভালো করে দিবেন আপনাকে). হাসপাতালের বিভিন্ন জিনিস চিনবে। ডাক্তার আংকেল/আন্টি সাদা জামা পরেন, গলায় একটা ইয়াব্বড় মালা ঝুলায় রাখেন, ওই মালা আবার কানেও দেন, রোগীরা সারি সারি বিছানায় অনেক বড় রুমে শুয়ে থাকে। ইত্যাদি চোখে আঙ্গুল দিয়ে খেয়াল করাবেন। বিভিন্ন সিচুয়েশন নিয়ে গল্প করবেন।

৩.বস্তি

বাসা থেকে ওর প্রিয় খাবার রান্না করে নিয়ে যাবে, অথবা ওর প্রিয় চকলেট বা বিস্কুট নেবে বেশ অনেক করে। এরপর বাচ্চাওয়ালা কোন বস্তি ফ্যামিলিতে একসাথে বসে(বসার ব্যবস্থা যত অপরিষ্কারই হোক, রাস্তায় হলে সেখানেই) খাবে, বস্তির বাচ্চার সাথে বন্ধুত্ব করবে। সেই সুযোগ যদি না থাকে শুধু বিস্কুট/চকলেট দেবে, সবগুলো। নিজের জন্য না রেখেই। আর টুকটাক কথাবার্তা বলবে। সম্ভব হলে বাসার গৃহকর্মীকে বাচ্চাকাচ্চা সহ দাওয়াত করবেন বাসায়। সেদিন সম্ভব হলে গৃহকর্মীর মেয়ের/ ছেলের জন্যও আপনার বাচ্চার মত একই ডিজাইনের জামা গিফট করবেন(সবসময় করা লাগবে এমন না)। অথবা বাচ্চা ঈদে একাধিক জামা গিফট পেলে সবচেয়ে সুন্দর কোনটা লাগে জিজ্ঞেস করবেন, এরপর সেটা কোন বস্তির বাচ্চা/ গৃহকর্মীর বাচ্চাকে নিজে হাতে গিফট করবে। একসাথে বসে খাবে, খেলবে। এগুলোর জন্য অনেক ঝক্কি পোহাতে হলেও দিনশেষে বাচ্চার উন্নতি দেখে বিস্মিত হবেন ইন শা আল্লাহ।

৩. বৃদ্ধাশ্রম

বয়স তিন হবার আগে এখান থেকে খুব একটা উপকার পাওয়ার সম্ভবনা কম। তিন এর পর একদিন বৃদ্ধাশ্রমে বৃদ্ধ/বৃদ্ধাদের সাথে গল্প করা, তাদের সাথে দীর্ঘক্ষণ সময় কাটানো যেতে পারে। তাঁরা যেহেতু এই বয়সী নিজেদের নাতি নাতনীদের কাছে পান না, আবেগাপ্লুত হয়ে যেতে পারেন। বাচ্চা সান্ত্বনা দেবে, একসাথে বসে বিস্কুট খাবে। বাচ্চার মনে ছোট্টবেলা থেকেই দুর্বল ও বয়স্কদের প্রতি সহানুভুতিমূলক মনোভাব গড়ে তুলতে সাহায্য করবে এ ধরণের আউটডোর ট্রিপ।

৪. এতিমখানা

এতিমখানাতেও বস্তির মতই বাচ্চাদের সাথে খেলবে। তবে এটা ওকে আলাদাভাবে বুঝাতে হবে যে এই বাচ্চাগুলোর আম্মু নাই, কোনদিন আসবে না, ওরা কাঁদলেও না। ওদের কেউ নাই। অনেক কষ্ট। দুই বছরের বাচ্চা সাধারণত একটু সহজ করে বললে এগুলো বোঝে।

৫. লাইব্রেরী

বাচ্চাকে বইয়ের মধ্যে হারিয়ে যেতে দিন। এত বই দেখে কার না ভালো লাগে? পড়তে তো আর পারবে না, দুই একটা বই নেবে মাঝে মাঝে নিজের খুশিমত, উলটে দেখবে ছবি আছে কিনা, আবার রেখে দেবে। কিন্তু মনে একটা আলোড়ন সৃষ্টি হবে এত বই দেখে। এরপর তাকে উৎসাহ দিতে হবে। তাড়াতাড়ি স্বরে অ স্বরে আ শিখ/রিডিং পড়া শিখ, এই সঅঅঅব বই পড়তে পারবে, কি মজা! 

৬. খেলার মাঠ

শেষ কবে আপনার বাচ্চা খোলা জায়গায় মুক্তভাবে শুধু দৌড়েছে দু’ হাত মেলে? শেষ কবে নরম ঘাসে লুটোপুটি খেয়েছে? বেশি না, এরকম কয়েক টুকরো স্মৃতি শৈশবের সবচেয়ে বড় পাওয়াগুলোর একটা। সম্ভব হলে পাশের বাসার বাচ্চাটাকেও সাথে নিয়ে যান, দুই বাচ্চারই একসাথে ভালো সময় কাটবে। তবে বল ছাড়া আর কোন আর্টিফিশিয়াল খেলনা সাথে নেবেন না। পাতার বাঁশি বানাতে শেখান(অরিগামী), বাজাতে শেখান। 

৭. চিড়িয়াখানা 

বাংলাদেশে চিড়িয়াখানার বর্তমান অবস্থা যদিও জানি না, কিন্তু যে জীবনেও হাতি দেখেনি তাকে জোর করে ঐ তে ঐরাবত শেখানো অন্যায়। এত এত পশুপাখির নাম মুখস্থ করাচ্ছেন, ওকে একটিবার সচক্ষে দেখার সুযোগ তো দেয়াই উচিত।

৮. মসজিদ

এখানে প্রায় নিয়মিতই নিতে পারলে খুব ভালো। আর কিছু লাগবে না, নিয়ে ছেড়ে দিন। খেলুক, বসে থাকুক, সবাইকে ডিস্টার্ব করুক, সমস্যা নেই। কেউ কটু কথা বললে আপনি হজম করুন, বাচ্চাকে জানতেও দেবেন না পারতপক্ষে। মাঝে মাঝে বাড়ি থেকে একটু দূরের মসজিদেও নিয়ে যান।

৯. হিফযখানা

কুরআন মুখস্থ করছে এরকম একঝাঁক পাখির মাঝে আপনার বাচ্চাটাকেও মুসহাফ হাতে বসিয়ে দিন। দেখুক, পড়ুক, শিখুক, উৎসাহ পাক। ও জানবে যে হিফয ওর বয়সী আরো বাচ্চারা করে, এটা খুব স্বাভাবিক একটা কাজ। তবে খেয়াল রাখতে হবে খুদে হাফিযদের যেন ডিস্টার্ব না হয়।

১০. ইসলামী হালাক্বা/বৈঠক

হালাক্বায় নেবেন, কিন্তু চুপচাপ বসে থাকতে বাধ্য করবেন না। যা খুশি করুক, খেলুক। এর মধ্যে দিয়েই ও ইলমী পরিবেশ দেখেব, অন্তরে ধারণ করবে ইন শা আল্লাহ। 

১১. বিবিধ

যে সাবজেক্ট পড়াশোনা করছে তার সাথে সম্পৃক্ত যে কোন জায়গা। যেমন কোন ছোটখাটো ক্ষেত খামার, ফ্যাক্টরি, ইত্যাদি, ব্যাংক, ইত্যাদি। হরহামেশা নিতে হবে তা না। কিন্তু অন্তত এক দুইবার বিভিন্ন আলাদা আলাদা পরিবেশে বাচ্চাকে উন্মুক্ত করা তার মানসিক বিকাশের জন্য খুবই উপকারী।

ছবি কৃতজ্ঞতা ফ্রিপিক
সম্পাদনা: হাবিবা মুবাশ্বেরা

লেখাটি কি আপনার উপকারে এসেছে?
হ্যানা